চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘ইগল হান্টে’ আবুসহ চার জন নিহত হয়েছেন। চারজনই আত্মঘাতি হয়েছেন।বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাথার বাড়ির পাশে রাজশাহী রেঞ্চের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খুরশিদ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।
এর আগে ওই বাড়ি থেকে এক নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই নারী বাড়িটিতে থাকা জঙ্গি সংগঠন পুরনো জেএমবির সদস্য আবুর স্ত্রী এবং শিশুটি এই দম্পতির সন্তান বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আবুর স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম। এ আস্তানায় অভিযান চলার সময় বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নারী এবং এর আধা ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।শিবগঞ্জের যে বাড়িতে অভিযান চলছে, তার প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই আবুর নিজের বাড়ি। পরিবারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গত ফেব্র“য়ারি থেকে তিনি সাইদুরের মালিকানাধীন বাড়িতে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।আবু ত্রিমোহিনী আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। স্থানীয় ৮-১০ জনের সঙ্গে চলাফেরা করতেন তিনি।সূত্র বলেছে, আবুর সঙ্গীদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান ওরফে মোহন (২৮) ও আবদুস সালাম (৩৫) নামের দুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে শিবনগর থেকে আটক করে পুলিশ। তবে তাঁদের আটক করার বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।

বৃহস্পতিবার বেলা ৫টার দিকে হলুদ শাড়ি পরা এক নারীকে এবং এর ২০ মিনিট পর শিশুটিকে বের করে আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।ওই নারী আবুর স্ত্রী সুমাইয়া বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। দুজনকেই আহত অবস্থায় চাঁপাইনবাগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনীগ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই একতলা ওই বাড়িতে মাস তিনেক ধরে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকতেন বলে ধারণা পুলিশের।এর আগে সকাল থেকে মাইকে কয়েক দফা বলার পরও আত্মসমর্পণ না করায় বেলা সোয়া ৪টার দিকে ভেতরে থাকা দুই শিশুকে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।তাছাড়া সকালে শেষবারের মতো তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একটি বোমা ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয় সন্দেহভাজন ওই জঙ্গি আস্তানায়।

এর আগে সকালে জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও বাড়ির ভেতরে ঢোকেনি। তবে বাড়ির ফটকে একটা বোমা পাওয়ার পর সেটা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে ।ডিআইজি খুরশিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চার জঙ্গি নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন ইগল হান্ট’ শেষ। আবু ছাড়া অপর তিনজনের পরিচয় আপাতত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো কোন অভিযানে এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই চারজনই আত্মঘাতি হয়েছেন।এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানায় পুলিশ। সে সময় এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। ওই আহ্বানের পর একপর্যায়ে ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট। সকালে ফের ‘ইগল হান্ট’ নামের অভিযান শুরু হয়।পুলিশ কর্মকর্তা ও এলাকাবাসী জানান, জঙ্গি আস্তানা হিসেবে যে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে, সেটি সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের। একটি আমবাগানে বাড়িটির অবস্থান। বাড়িটিতে একই গ্রামের বাসিন্দা আবু (৩০) স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সোয়াটের পক্ষ থেকে এই আবুকে পুরোনো জেএমবির সদস্য বলে জানানো হয়। আবুর পরিবার ছাড়াও বাড়িতে আরও দুজন থাকতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়িটি থেকে গত রাতে ও আজ ভোরে কয়েক দফা গুলির শব্দ ভেসে আসে। সকাল নয়টার পর সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ আসে। অভিযান চালাকালে দিনভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়।ঘটনাস্থলে সকালেই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আসে। সেখানে আছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছে।দুপুর ১২টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে মাইকে মিনিট পাঁচেক ধরে আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’র স্থান থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সেখান থেকে ধোঁয়ার কু-লী উড়তে দেখা যায়। এরপরই বাড়িটির দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের যেতে দেখা যায়।জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল ভোর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে জেলা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গতকাল ভোর থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা বজায় থাকবে বলে মাইকিং করে জানানো হয়েছে।সন্ধ্যার দিকে বাড়িটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে সোয়াট। গতকাল সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলি ও কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। রাত নয়টার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। আজ ভোরে ফের অভিযান চালানোর কথা জানানো হয়।বুধবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই বাড়িটি পুলিশ ঘেরাও করার পর সন্ধ্যায় অভিযান চালায় সোয়াট। কিন্তু দুই ঘণ্টা পরই স্থগিত করে।রাতের বিরতির পর সকাল ৯টার দিকে ফের অভিযান শুরুর পর সোয়া ১২টায় আত্মসমর্পণের শেষ আহ্বান জানানো হয়।এর আগে অভিযান শুররুর সময় থেকে এক-আধ ঘণ্টা পরপর শোনা যাচ্ছে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। ১০টা ৬ মিনিটে একবার বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।

অপারেশন ঈগল হান্ট নামে পরিচালিত এই অভিযান শুরুর আগেই সকাল ৮টার দিক থেকে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস।নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশ ওই বাড়ির আশপাশের প্রায় পাঁচ শ গজের ভেতর কাউকে যেতে দিচ্ছে না।অপারেশন শুরুর পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান বলেন, একতলা ওই বাড়ির ভেতরে নারী ও শিশুসহ চারজন আছে বলে আমরা ধারণা করছি। দিনে মাইকের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি।বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ির ভেতর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় এবং চার-পাঁচটি বিকট বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পর উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই বাড়ির কাছে পৌঁছান সোয়াট সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ওই বাড়ির দিক থেকে টানা গুলির শব্দ পান শ পাঁচেক গজ দূরে অবস্থানরত সাংবাদিকরা। জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সোয়াটের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’।জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে বুধবার ভোরে উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানোর পর পুলিশ গত শুক্র ও শনিবার ঝিনাইদহের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে ‘বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম’ উদ্ধার করে।এরপর মঙ্গলবার দিনভর রাজশাহীর একটি এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ব্লক রেইড চলে। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি পুলিশ।