01552601805_20130308024617

দৈনিক বার্তা-ঢাকা,২৯জুলাই : রমজান শেষ৷রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে ঈদের আনন্দ৷ ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি? ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি গিয়ে হারাতে হবে না কি সহায়-সম্বল? এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীবাসীর মনে৷ এ নিয়ে ঘরমুখো মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে৷  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশ্বাস দিয়েছে পরিপূর্ণ ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নিশ্চিত আশ্বাসের পরেও ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া অনেকেই রয়েছেন আতঙ্কে৷ বিশেষ করে যারা অতীতে এমন আশ্বাসের পরেও চুরি, ছিনতাইকারী কিংবা ডাকাতির শিকার হয়েছেন৷

মঙ্গলবার ঈদের দিন ঘুরে দেখা গেছে, দুইদিন আগে যেখানে রাস্তায় ও ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা ছিল না, সেখানে এখন জনশূন্যতা৷ গাড়ি চলছে আপন গতিতে৷ সিএনপি ও রিকশার দাপুটে ভাব আর নেই৷ এখন নায্য ভাড়ায় চলছে গাড়ি৷ রমজানের শুরু থেকে যাত্রীদের কাওরান বাজারের মোড় থেকে মতিঝিলে রমজানে সিএনজি ভাড়া গুনতে হয়েছে তিন থেকে ৪০০ টাকা৷ সেখানে আজকে ভাড়া দিতে হচ্ছে একশত বিশ থেকে ১৫০ টাকা৷

সাধারণ মানুষে জীবিকার টানে ব্যস্ত নগরী ঢাকায় থাকলে ঈদে নাড়ির টানে চলে গেছেন নিজের বাড়িতে৷ পুরো পরিবার একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্বপরিবারে ঢাকা ছেড়েছেন নগরীর কর্মব্যস্ত মানুষগুলো৷ সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে লম্বা ছুটির রেশ৷ অন্যবারে ঈদের ছুটি তিন থেকে চারদিনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা দাঁড়িয়েছে ছয় দিনে৷ যা রাজধানী ফাঁকা হতে বাড়তি সুবিধা যুগিয়েছে৷ গাড়ি অনেক আছে, বরং মানুষ অপেক্ষাকৃত কম এবার৷ রোববার সকাল থেকে বিপণি বিতান সংলগ্ন সড়কগুলো ছাড়া রাজধানীর অন্যান্য সড়কে যানবাহনের ভিড় ছিল অনেক কম৷রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চলাচলের বাড়তি সুবিধা নিয়ে শেষ সময়ের ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যায় অনেককে৷তবে গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন বাস মালিকদের প্রতি৷ তাদের অভিযোগ, ঈদে বাড়তি ভাড়া পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কোম্পানির অনেক বাসই যাত্রী নিয়ে ঢাকার আশপাশের জেলায় চলাচল করছে৷ এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা৷

মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম হলেও পর্যাপ্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশার দেখা মিলেছে৷ তবে ভাড়া খানিকটা বেশি৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ বিশেষ করে রাজধানীর ঈদগাহগুলোতে থাকছে কঠোর নিরাপত্তায়৷ মোতায়েন করা হচ্ছে র্যাব-পুলিশের প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য৷এছাড়া ঈদের পর ৩ আগস্ট পর্যন্ত পুরো রাজধানী থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে৷

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাসরত এমনই এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রজব আলী তার ভাষায় বলেন, মুই গত বছর পরিবার লগে লইয়্যা ঈদে বাড়ি গেছেলাম৷ পরে আইয়্যা দেহি কারা জানি মোর বাসার তালা ভাইঙ্গা আলমারি-শোকেস সব চুরি কইররা লইয়্যা গেছেগা৷ মোর ঘরে থাহা টিবি, বৌয়ের স্বর্ণের জিনিস-পত্রসহ দামি দামি সবকিছুই৷ হেইক্কালে মোর কয়েক লাখ টেহার ক্ষতি অইছে৷

এছাড়াও ঢাকার শ্যামলিতে বসবাসকারী চাঁদপুরের আব্দুর রহমান হাসান জানিয়েছেন তার আশঙ্কার কথা৷ তিনি বলেন, অফিস করার জন্য গত দুই সপ্তাহ আগে বের হয়েছিলাম৷ এ সময় বাসার দরজা ভেঙে ল্যাপটপ, জমিয়ে রাখা নগদ টাকাসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে গেছে চোর চক্র৷ ৮-১০ ঘন্টার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছিল৷ আর ঈদ উপলক্ষে বাড়ি গেলে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো চোর চক্রের জন্য আরো সহজ হয়ে যাবে৷

এদিকে নিরাপত্তার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, মানুষ যেভাবে বাসা খালি রেখে যায়, ঠিক সেভাবে যেন তারা পায় পুলিশ সে ব্যবস্থাই করবে৷ ঈদের পর ৩ আগস্ট পর্যন্ত স্পেশাল নিরাপত্তা বহাল থাকবে৷তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে৷ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যে সকল সিকিউরিটি গার্ড নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে৷ এছাড়াও যে স্থান সমূহে সিসিটিভি ( ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা) রয়েছে সেগুলো যাতে কার্যকর থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে৷ আর পাড়া-মহল্লা ও ওয়ার্ড সমূহে যে সকল কমিউনিটি পুলিশ রয়েছে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে৷  সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপারে তিনি বলেন, ঈদের সময় সাধারণত রাজধানীর সড়কগুলো ফাঁকা থাকে৷ আর অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গাড়ি চালানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এবং ড্রাইভারকে ঈদের ছুটি দিয়ে অপ্রশিক্ষিত মালিক নিজেই গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেন৷ ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে৷

প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা৷  এদিকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের মিডিয়া উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানিয়েছেন, এ বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আট হাজার র্যাব সদস্য নিরাপত্তার জন্য রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করবে৷ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনসহ বিশেষ-বিশেষ স্থানে থাকবে র্যাবের ডগ স্কোয়াড৷ এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় থাকবে বিশেষ নজরদারী৷এত প্রস্তুতির পরও সংশয় থাকে, ফিরে এসে ঘর বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ঠিকমতো পাওয়া যাবে তো? পবিত্র রমজান মাসের প্রথম থেকেই রাজধানী ঢাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)৷৷ঈদের পর ঢাকার জনজীবন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা রাখা হবে৷

সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ ও র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান৷ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ডিএমপির কমিশনার বেনজীর আহমেদ এবং র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) মোখলেছুর রহমান৷

ডিএমপির কমিশনার বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের সময় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষ ফিরে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে৷ডিএমপির কমিশনার দাবি করেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নগরবাসী শান্তিপূর্ণভাবে এবারের রমজান মাসে রোজা পালন করেছেন৷

বেনজীর আহমেদ বলেন, এবারের ঈদে ৫০ লাখ মানুষ বাড়ি যাওয়ায় রাজধানীর ১০ লাখ বাসা-বাড়ি ফাঁকা হয়েছে৷ নগরের বিপণিবিতান, ব্যাংক-বিমা, অফিসও বন্ধ রয়েছে৷ তাই রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তার দিকে লক্ষ রাখা হবে৷র্যাাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান জানান,ঈদের সময় কেবল ঢাকা শহর নয়, পুরো দেশেই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে র্যাব৷ রাজধানীর নিরাপত্তায় আড়াই হাজার র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবেন৷ আর সারা দেশে থাকবেন সাড়ে তিন হাজার সদস্য৷ জনজীবন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাজ করবেন৷

ঈদের প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে র্যাাব৷ মোতায়েন থাকবে তাদের ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রীয়করণ দল৷ ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে মহানগর পুলিশ৷ঈদগাহে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এছাড়া প্রায় ফাঁকা রাজধানীতে চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধ ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷