শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনটিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি কমিশনার বলেন, শহীদ মিনারের বেদী কেন্দ্রীক প্রথম স্তর, শহীদ মিনারের বাইরে দ্বিতীয় স্তর, দোয়েল চত্বর-শাহবাগ-নীলক্ষেত-পলাশী-বকশীবাজার কেন্দ্রীক তৃতীয় স্তর ও এর বাইরে আরেক স্তর। এর মাধ্যমে শহীদ মিনারকে ঘিরে মোট চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির পর উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।শহীদ মিনারের নিরাপত্তায় পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে মোট আট হাজার পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।তিনি আরো বলেন, শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবাইকে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মূল বেদীতে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া ম্যানুয়ালি ও হ্যান্ডমেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে।মৎস্যভবন থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে এবং দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী পর্যন্ত শহীদ মিনারের পুরো এলাকার প্রতি ইঞ্চি সিসিটিভির আওতায় থাকবে বলেও জানান কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, সিসিটিভিগুলো কন্ট্রোলরুম থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। কোথাও সমস্যা মনে হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনারের পুরো এলাকা ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। শহীদ মিনারের চারপাশে ডিএমপির ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।৫টি ফুট পেট্রোল টিম শহীদ মিনারের চারপাশে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২০ ফেব্র“য়ারি রাত ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকবে।মহান একুশের প্রথম প্রহরে ভিভিআইপি ছাড়া সবাই শহীদমিনারে যাবেন পলাশীর মোড় হয়ে। কঠোরভাবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, কূটনীতিক কোরের সদস্যরা মৎস্যভবন হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে শহীদ মিনারের পথে যাবেন। এর বাইরে যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে পলাশীর মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে হবে।

গতবছর শহীদ মিনারে প্রবেশে দোয়েল চত্বরে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং পরে জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে উঠে পড়ে, সে কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ বছর যেন তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিরা শহীদ মিনারে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চলে গেলেই পলাশীর পথ খুলে দেওয়া হবে। তার আগে এ পথ আটকে রাখা হবে। এ অবস্থায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এ বছর কেউ যাতে শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে উঠে পড়তে না পারে সেজন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাণের এ উৎসবে কেউ যেন বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে, সব পর্যায়ের মানুষ যাতে ভাষার শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দফায় দফায় সমন্বয় সভা করা হয়েছে আর তার ভিত্তিতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।সবার সহযোগিতায় এ উৎসব সুসম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনে কোনো হুমকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২১ ফেব্র“য়ারি উদযাপনকে ঘিরে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই। আমরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছি। ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।দুই বছর আগে ২১ ফেব্র“য়ারির দুইদিন পর অভিজিৎ হত্যাকান্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জনতে চাইলে তিনি বলেন, বইমেলায় নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় এবার তেমনটাই নেওয়া হয়েছে। অতীতে আমাদের যে ব্যর্থতা তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।

অভিজিৎ হত্যাকান্ডের তদন্ত কাঙ্খিত গতিতেই চলছে। দু’একজন আমাদের অভিযানে নিহত হয়েছেন। কয়েকজন গ্রেফতার আছেন। আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।পুলিশ কমিশনার বলেন, শহীদ মিনার ঘিরে চারটি নিরপত্তা বেষ্টনীর একটি থাকবে বেদী কেন্দ্রীক, একটি থাকবে শহীদ মিনার কেন্দ্রীক, একটি দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত, পলাশী, চানখারপুল এবং আরেকটি অন্য এলাকাগুলো ঘিরে থাকবে।

শহীদ মিনারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্রাফিক বিভাগ তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে শহীদ মিনারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা মৎস্য ভবন থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে প্রবেশ করবেন। সাধারণ মানুষ পলাশীর মোড় থেকে প্রবেশ করতে পারবে।ওইদিনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শহীদ মিনারের প্রবেশ পথে থাকবে ম্যানুয়াল চেকিং, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেকিং ও সর্বশেষ আর্চওয়ে পার হয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে। চারদিকে থাকবে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ও পেট্রোল ব্যবস্থা।মৎস্যভবন থেকে নিউমার্কেট এলাকা ও বিশেষ করে দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী এলাকার প্রতিটি জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে, যা কন্ট্রোলরুম থেকে মনিটর করা হবে। সেখান থেকে সার্বক্ষনিকভাবে পুরো এলাকার নিরাপত্তা তথ্য আদান প্রদানের সুযোগ থাকবে। যে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ২০ ফেব্র“য়ারি শহীদ মিনার ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। নিরাপত্তায় নজরদারিতে শহীদ মিনারের চারপাশে থাকবে ওয়াচটাওয়ার।

পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময়ে কোনো ভাসমান দোকান সেখানে থাকবে না বলেও জানান তিনি।গত বছর একটি দলের কর্মী সমর্থকরা দোয়েল চত্বর থেকে উল্টোপথে অযাচিতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পুলিশকে লাঞ্চিত করে শহীদ মিনারে জুতো পায়ে প্রবেশ করেছিল। এই জাতীয় পরিস্থিতি সর্বমহলে নিন্দিত হয়েছিল। এই পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে সেজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথাও বলেন তিনি।

২১ ফেব্র“য়ারি উপলক্ষে ট্রাফিক নির্দেশনা: এই নির্দেশনা ২০ ফেব্র“য়ারি রাত ৮টা থেকে ২১ ফেব্র“য়ারি বেলা ২টা পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে বলে মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।আজিমপুর গোরস্থানে যাওয়ার রাস্তাঃনাজিম উদ্দিন সড়ক, বাবুপুরা সড়ক (পুরানো যাদুঘরের সামনের রাস্তা), কলেজ সড়ক (ফজলুল হক হলের পূর্ব পার্শ্বের রাস্তা), এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর গোরস্থানে যাওয়ার জন্য দেওয়ান বাজার সড়ক (বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের পূর্ব পার্শ্বের রাস্তা), কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নীলক্ষেত সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক হয়ে নিউমার্কেট ১ নম্বর গেইট দিয়ে যাবেন।আব্দুল গণি সড়ক, তোপখানা সড়ক এবং শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (পার্ক এভিনিউ) এর জনসাধারণ পুরাতন হাই কোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক দিয়ে ১ নম্বর গেইট হয়ে গোরস্থানে যাবেন।লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী ও চকবাজার এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউ মার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেইটের ভেতর দিয়ে যাবেন।

বকশী বাজার সড়ক, চকবাজার, উর্দূ রোড এবং ঢাকেশ্বরী এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউ মার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেইটের ভিতর দিয়ে যাবেন।প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকার জনসাধারণ দোয়েল ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউমার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেটের ভিতর দিয়ে যাবেন।আজিমপুর গোরস্থানের মূল গেইট থেকে (গোরস্থানের দক্ষিণ পার্শ্বে) বের হয়ে আজিমপুর সড়ক, আজিমপুর বেবী আইসক্রিম মোড়, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।

বকশী বাজার, চকবাজার, উর্দূ রোড, ঢাকেশ্বরী সড়ক, নাজিম উদ্দিন সড়ক, বাবুপুরা সড়ক এলাকার জনসাধারণ যারা গোরস্থানে না গিয়ে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা পুরাতন রেলওয়ে হাসপাতাল সড়ক, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।আব্দুল গণি সড়ক, তোপখানা সড়ক, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (পার্ক এভিনিউ) এলাকার জনসাধারণ গোরস্থানে না গিয়ে শহীদ মিনারে যেতে চাইলে তারা হাই কোর্ট, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।যেসব ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারণ রোকেয়া হল, সামসুন্নাহার হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকা থেকে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন। যানবাহন চলাচল সম্পর্কিত নির্দেশাবলী: পুলিশের নির্দেশনায় থাকা রাস্তা দিয়ে ২০ ফেব্র“য়ারি রাত ৮টা থেকে ২১ ফেব্র“য়ারি বেলা ২টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। গোরস্থান এবং শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন তারা অন্যদের অসুবিধার কথা ভেবে রাস্তায় বসা বা দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। সবার চলাচলের সুবিধার জন্য উপরে বর্ণিত রাস্তায় কোনো প্রকার প্যান্ডেল তৈরি না করার জন্য অনুরোধ করা হলো বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।