0cc95a032ccc9c1439e03945dc42c7f9-Mp

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ আগস্ট, ২০১৫: এবারের ঈদের জন্য দেশে ৩০ লাখ গরু-মহিষ, ৬৯ লাখ ছাগল রয়েছে। তাই আগামী ঈদ-উল আযহায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট থাকবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন তিনি।সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের টিসিবি ভবনে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত একটি সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কাওরান বাজারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, উৎপাদনকারী, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকদের সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ঈদ উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি নিতেই মূলত সরকারি কর্মকর্তা, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নেতা এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে এ সভায় বসেন তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোরবাণীর ঈদে পশুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, লবন, আদাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বাজারে সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। সরবরাহ অব্যাহত রাখতে যাতে কোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিগত রমজানের ঈদে যেমন বাজার স্থিতিশীল ছিল, সামনের কোরবাণীর ঈদেও পণ্য মূল্য স্বাভাবিক থাকবে। মন্ত্রী বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যে বাজারের চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য এখন মজুত রয়েছে। এ সকল পণ্যের সংকট বা মূল্য বৃদ্ধি হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আসন্ন কোরবানীর ঈদে কোরবানীর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার সংকট হবে না। চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানীর পশু দেশে মজুত রয়েছে। সরকার দেশী খামারে গবাদী পশুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশেই এখন প্রচুর কোরবানীর পশু উৎপাদন হচ্ছে। আগামীতে চাহিদা পূরণের পর বাংলাদেশ বিদেশে পশু রফতানি করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে দেশের অভ্যন্তরে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেঁয়াজ আমদানির জন্য গৃহীত ঋণের সুদহার কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মজুতের বিরুদ্ধে সরকার বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে।তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশি অন্যান্য দেশ থেকে পেয়াঁজ আদানির ফলে দাম ইতোমধ্যে অনেক কমেছে। কয়েকদিনের মধ্যে মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আতংকিত হবার কোন কারন নেই। বাজারে এখন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পেয়াঁজ রয়েছে। দেশে পেয়াঁজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আর চিনির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চিনির মজুদ রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। পাইপলাইনে যা রয়েছে, সব মিলিয়ে চিনির বাজার থাকবে স্থিতিশীল।

রসুনের সংকটের আশঙ্কাও তারা করছেন না। বলছেন, দেশি রসুন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তাই বাইরের রসুন পাওয়া না গেলেও কোনো সংকট হবে না।কাঁচা মরিচের দাম কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কমে আসবে বলেও জানান ব্যবসায়ী নেতারা।সংকট কাটাতে কাঁচা মরিচের আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেন মাতলুব। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এতে বর্তমান সংকট কাটানো গেলেও ভবিষ্যতে দেশের চাষীরা সমস্যায় পড়বেন। কারণ, ব্যবস্থাটি রাখাই হয়েছে দেশি চাষীদের বাঁচাতে।এ আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রী বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রাখেন। এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি।প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মন্ত্রীকে জানান, পশু পালনে ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগে ভবিষ্যতে পশু সংকট আরও কমে আসবে।পশুর দাম বাড়ার খবর কম প্রচার করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে দাম আরও বেড়ে যায়।উপস্থিত সবাই মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, পশু ও পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ঠিকভাবে সরবরাহ করা গেলে ঈদে বা আগে পরে কোনো সংকট হবে না।সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কামাল, মেঘনা গ্র“পের মোস্তফা কামালসহ আমদানিকারক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।