চাঁপাইনবাবগঞ্জ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দুই দিনের অভিযান শেষে ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হলেও তাদের তিনজনকে চেনার উপায় নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’-এ নিহত চারজনের মধ্যে আবু কালাম ওরফে আবু ছাড়া বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ অপারেশন সমাপ্ত ঘোষণা করার পর আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে নিহত চারজনের লাশ জঙ্গি আস্তানা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।লাশ প্যাকেট করার কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, চারজনের পরনেই ছিল জিনসের প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি। দুজনের দেহ ছিন্নভিন্ন। আবু ছাড়া অন্যদের চেহারা চেনা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেছ আলী মিয়া জানান, আবুর লাশ ছাড়া বাকিদের শনাক্ত করা যায়নি। জঙ্গি আস্তানা থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও একটি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে এখনও উদ্ধারকাজ চলছে।শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলামের ভাষ্য, ভেতরে আরও বিস্ফোরক থাকতে পারে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে তিনি জানান।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ শেষ করে চলে গেছে। ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিন দল কাজ করছে।প্রসঙ্গত, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের আমবাগানের ভেতরের একটি বাড়িতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার ভোরে বাড়িটি ঘেরাও করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও জেলা পুলিশ। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সেখানে অভিযান শুরু করে সোয়াট টিমের সদস্যরা। অভিযানের নাম দেওয়া হয়-অপারেশন ঈগল হান্ট’। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান স্থগিত করা হয়। সকাল ৯টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো ফের অভিযান শুরু করে সোয়াট টিমে। অবশেষে রাতে অপারেশন সমাপ্ত ঘোষণা করা আইনশঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেস আলী মিয়া বলেন, ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা তাদের কাজ শেষ করার পর জঙ্গি আস্তানা থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের তিনজনকে চেনার উপায় নেই।এর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘিরে রাখা বাড়িটি থেকে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা একটা সুইসাইড ভেস্ট ও একটা পিস্তল উদ্ধার করে বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম।

শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী গ্রামের আমবাগান ঘেরা জেন্টু বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির আধাপাকা একটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে বুধবার সকালে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সোয়াটের অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানে চারজনের লাশ মেলে, যারা নিজেদের ঘটানো বিস্ফোরণে মারা যান বলে পুলিশ জানায়।শুক্রবার বেলা দেড়টায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হলো। এ ঘটনায় এখনও মামলাও হয়নি।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেস আলী মিয়া বলেন, চারজনের মধ্যে শুধু আবুর লাশ অক্ষত আছে। অন্য তিনজনের দেহ ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় তাদের চেনা যায়নি। তবে তাদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বেলা দেড়টায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এলাকাবাসী বা সাংবাদিকদেরও বাড়ির কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না। ওই বাড়ির আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও অভিযান শুরু পর থেকে যেতে দেওয়া হয়নি বাসিন্দাদের।স্থানীয়রা বলছে, জেন্টু বিশ্বাস তার ওই বাড়িতে আবুকে ভাড়া ছাড়াই থাকতে দিয়েছিলেন। ৭৫ বছর বয়সী জেন্টু বিশ্বাস এলাকার ধনী ব্যক্তি। নিজের পরিবার নিয়ে পাশের আরেকটি বাড়িতে থাকেন তিনি।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখায় জেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোয়াটের অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও একটি মেয়েকে জীবিত ধরার পর পায়ে গুলিবিদ্ধ সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়াকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১টা ১০ মিনিটে এ হাসপাতালে আনা হয়।তাকে পুলিশ হেফাজতে ১৩ নম্বর কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ছাড়া তার কেবিনে অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ।সুমাইয়ার হাঁটুতে গুলির ক্ষত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ তার অপারেশন হবে।সুমাইয়া আশঙ্কামুক্ত বলে তিনি জানান।রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, সুমাইয়াকে ভর্তির পর হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালের তৃতীয় তলার কেবিনগুলোয় সাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।শিবগঞ্জ উপজেলার চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবু (৩০)।একসময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে নিজেদের বাড়িতে তার বাবা-মা থাকেন।আবুর মা ফুলছানা বেগম বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন – সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।মাস তিনেক ধরে আবু স্ত্রীসহ আট ও ছয় বছরের দুই মেয়ে নিয়ে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের ওই বাড়িতে থাকছিলেন।