দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ মে: চল্লিশ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ফার্মাসিউটিক্যালস বাজার এখন গোটা তুরষ্কতে। এর মধ্যে দশ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পন্য দেশটি আমদানী করছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে। আঙ্কারায় বাংলাদেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান নিশ্চিত করেই বললেন, এই দশ বিলিয়ন ডলারের একটা পার্সেন্টেজও যদি বছরে বাংলাদেশ পায়, তবে সেটা হবে আমাদের জন্য বিশাল এক ব্যাপার। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত জানান, “মূলতঃ তাঁর উদ্যোগের ফসল হিসেবেই ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে ঔষধ আমদানী করে তুরষ্ক, যা ছিল ব্রেক-থ্রো এবং আজ এটা রূপ নিয়েছে আমাদের গর্বের বিষয়ে”।
বাংলাদেশে তৈরী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ঔষধের আরো ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান বলেন, “টার্কির ঔষধের বাজার ধরতে যে কোন বিদেশী কোম্পানিকে যেখানে প্রায় ৫ বছর সময় লাগে সেখানে আমরা মাত্র আড়াই বছরেই সফল হতে পেরেছি। ২০১১ সালে প্রক্রিয়াটি প্রথম আমি শুরু করি এবং ঐ বছর এপ্রিল মাসে ঢাকা একটা ডেলিগেশন এখানে আসে। মেইন ইউরোপের মতোই জটিল প্রক্রিয়া এখানেও। উচ্চপদস্থ টার্কিশ কর্মকর্তাদের সাথে লবিং করে এখানকার ডিজি ফার্মাসিউটিক্যালস সহ বিশেষ ডেলিগেশনকে ঢাকায়ও পাঠিয়েছিলাম তখন”।
বাংলাদেশের ঔষধশিল্পের আদ্যোপান্ত সরেজমিনে দেখে এসে টার্কিশরা খুবই সন্তুষ্ট বলে জানান ঝানু কূটনীতিক জুলফিকার রহমান। সুনির্দিষ্ট করে তিনি বলেন, “আমাদের ম্যানুফেকচারি প্ল্যান্টগুলো দেখার পর ফিরে এসে তাঁরা বলেছে, বিশ্বমানের ঔষধ উৎপাদনে বাংলাদেশের ক্ষমতা, এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়”। রাষ্ট্রদূত আরো জানান, “তারপর থেকে সবকিছু ইজি হয়ে গিয়েছে এবং বিরাট একটা এভেনিউ খুলতে যাচ্ছে এখন এই সেক্টরে”। ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেডিমেইড গার্মেন্টস (আরএমজি) ছাড়াও বাংলাদেশের জুট ইয়ার্ন তথা পাট দিয়ে তৈরী সুতলি বা রশিও বিগ ভলিউমে এখানে আসছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান।
তুরষ্কের কার্পেটের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। বাংলাদেশ থেকে আসা জুট ইয়ার্ন দেশটিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কার্পেটের নিচে। রাষ্ট্রদূত জানান, “পরিবেশ বান্ধব কার্পেট চায় এখানকার লোকজন এবং এ কারণে জুট ইয়ার্ন মিক্স করে কার্পেটটা এরা তৈরী করছে। তুরষ্কের বাজারে বাংলাদেশী এই প্রোডাক্টের চাহিদা বহুগুণে বাড়লেও আমাদের সাপ্লাই ক্যাপাসিটি কম হওয়ায় ডিমান্ড অনুয়ায়ী আমরা সাড়া দিতে পারছি না। তারপরও বছরে ২ থেকে আড়াইশ’ মিলিয়ন ডলারের জুট ইয়ার্ন বাংলাদেশ থেকে এখন আসছে টার্কিতে। এটা আরো বোড়ানো সম্ভব হতো যদি ঢাকাতে সাপ্লাইয়ার বেশি থাকতো”।
অন্যদিকে ক্যামিক্যাল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টের পাশাপাশি তুরষ্ক থেকে জেনারেটর ও ফ্রিজ-টিভি বাংলাদেশে যাচ্ছে বলে এই প্রতিবেদককে জানান রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। বাংলাদেশে টার্কিশ বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, “কিছু ইনভেস্টমেন্ট ইতিমধ্যে বাংলাদেশে গিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাখরাবাদ-ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস পাইপলাইন কাজ চলছে। এনার্জি সেক্টরে সম্ভাব্য আরো কিছু ইনভেস্টমেন্ট এখন আলোচনার টেবিলে রয়েছে। আরএমজি সেক্টরে আগে থেকেই ছিল, এখন তুর্কি বিনিয়োগ ঢাকায় যাচ্ছে কার্পেট ম্যানুফেকচারিংয়েও। এখান খেকে বেশ কিছু কার্পেট ম্যানুফেকচারিং কারখানা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে রি-লোকেট করেছে”। রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমানের সন্তোষ, “সব মিলিয়ে ইটস অ্যা ভেরি গুড সিচুয়েশন”।