atm-shamsul-huda_318658

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: বর্তমানে দেশের অর্থনীতি একটা খাদের মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।সাইফুর রহমানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দূররে সামাদ রহমান ও সাইফুর রহমান ফাউন্ডেশন এ সভার আয়োজন করে।শামসুল হুদা বলেন,কোনো দেশের অর্থনীতি একদিনে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যেতে পারে না। এরশাদের আমলের শেষ দিকে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দুই ভাগ। সাইফুর রহমান তা ৬ ভাগে উন্নীত করেন। গোষ্ঠীগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনীতির জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটি এম শামছুল হুদা।শামছুল হুদা বলেন,আমরা সবাই রাজনীতিকদের নিজস্ব স্বার্থে কাজ করি। কেউ দেশ ও অর্থনীতির জন্য কাজ করি না। কিন্তু আমাদের সবাইকে রাজনীতি ও অর্থনীতির স্বার্থে কাজ করতে হবে। তা হলে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব, অন্যথায় নয়।

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যেটা রাজনীতির জন্য প্রয়োজন, সেটা অর্থনীতির জন্য সব সময় ভালো নয়।সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে শামছুল হুদা বলেন, ‘ধনী ব্যক্তিরা গরীবের টাকা লুটপাট করবে এটা সাইফুর রহমান কখনো মেনে নিতে পারেননি। আর এ কারণে তিনি ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং এর জন্য নতুন আইনও করেছিলেন।সাইফুর রহমানকে স্মরণ করে সাবেক এই সিইসি বলেন, সাইফুর রহমান ব্যাংক সেক্টরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যা করেছেন তা এতো গুরুত্বপুর্ণ যে তার নেয়া পদক্ষেপগুলো আজ রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখেও কেউ ফেলে দিতে পারছে না। যেমন মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি, ভ্যাট প্রবর্তন, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচির মতো পদক্ষেপগুলো উনিই নিয়েছেন।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমান কাজ করতেন গুণাগুণ বিচার করে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে এর ছাপ ছিল। বাংলাদেশের আর্থিক শৃঙ্খলার যে বুনিয়াদ দেখছেন তা সাইফুর রহমানের হাতে গড়া। উনি হচ্ছেন এদেশে আর্থিক সুব্যবস্থাপনার প্রধান স্থপতি-এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে।শামসুল হুদা বলেন, সাইফুর রহমান তার মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনো কার বাড়ি কোথায় এসব দেখতেন না। কার কী কাজ আছে, মেধা ও সুনাম কেমন- এসব দেখে তিনি নিয়োগ দিতেন।

তিনি বলেন,দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের ভালো করা- এ বিষয়টা যদি আমাদের সব রাজনীতিবিদদের মধ্যে থাকতো, তাহলে দেশ আরও অগ্রসর হত।সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড.এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশর আর্থিক সু-ব্যবস্থার প্রধান স্থপতি। দেশের অর্থনীতির জন্য সাইফুর রহমান যে অবদান রেখে গেছেন চাইলেই কেউ এ অবদান অস্বীকার করতে পারবে না। ব্যাংকিং ে ে ক্টরে যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা শৃঙ্খলায় এনেছেন তিনি। ঋণ খেলাপীর বিষয়ে তার ছিল শক্ত অবস্থান। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-কানুনের বালাই ছিল না। সাইফুর রহমান সেটাকে নিয়মের ভেতরে এনেছেন।

শামছুল হুদা বলেন, সাইফুর রহমান দেশের জন্য যা কল্যাণ মনে করেছেন, তাই করার চেষ্টা করেছেন। তিনি সিলেট জেলার সন্তান হলেও কাউকে জেলা দিয়ে মূল্যায়ণ করতেন না। কাজ ও সুনাম দিয়ে সবাইকে মূল্যায়ণ করতেন। এজন্য তার প্রতি সরকারি কর্মচারীদের যে শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিলো, তা বিরল। সাবেক এই সিইসি আরো বলেন, সাইফুর রহমানকে বাইরে থেকে অনেকেই খুব কঠিন হিসেবে জানতেন। কিন্তু তার ভেতরের প্রকৃতিটা কত সরল, তা কাছে না গেলে বুঝা যেতো না। শামছুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তি স্বার্থ বলে একটা কথা থাকে। কিন্তু সাইফুর রহমান এর থেকে অনেক দূরে ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের আগেই বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছেন সাইফুর রহমান। তিনি একজন সফল অর্থমন্ত্রী ছিলেন।তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনায় কখনোই সাইফুর রহমান হস্তক্ষেপ করেননি। দেশের অর্থনীতি যে এগিয়ে যাচ্ছে তার মূল কারিগর হচ্ছেন সাইফুর রহমান। যার সুফল এখন আসতে শুরু করেছে।আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, সাইফুর রহমান আজকের মতো দলবাজির ঊর্ধ্বে ছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি। দলের মধ্যে থেকেও তিনি যা সঠিক, সমাজের কল্যাণে আসবে মনে করতেন তাই করেছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, সাইফুর রহমানের মধ্যে দলকানা ব্যাপারটি ছিল না। তিনি নিজেকে সব সময় রাজনীতির উর্ধে রাখতেন। তিনি বলেন, সাইফুর রহমান এমন একজন ব্যাক্তিত্ব, যাকে আঞ্চলিক পরিসরে আবদ্ধ করে রাখা ঠিক হবে না। তিনি গোটা দেশর সম্পদ। যার মৃত্যুতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সাবেক অর্থ সচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমদ খান বলেন, সাইফুর রহমান দেশের জন্য যে অবদান রেখে গেছেন। তা চিরদিন অবস্মরনীয় হয়ে থাকবে।দূররে সামাদ রহমান ও সাইফুর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমানের পূত্র এম নাসের রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাবেক অর্থসচিব ছিদ্দিকুর রহমান।