141127154508

দৈনিকবার্তা-নারায়নগঞ্জ,২৭নভেম্বর: নারায়ণগঞ্জে বিআটিএর কার্যালয়ের প্রবেশ ফটকের দুই পাশের দেয়ালেই সাদা কাগজে লেখা রয়েছে দালাল বা প্রতারক হতে সাবধান! কার্যালয়ের ভেতরেও বিভিন্ন দেয়ালে লেখা আছে এই সতর্কবাণীটি৷ এর নিচে লেখা রয়েছে যে কোন সেবা পেতে আইডি কার্ড পরিহিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য৷ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি ওঠানো, আঙ্গুলের ছাপ ও ডিজিটাল স্বাক্ষর গ্রহণের সময় কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ তবে দেয়ালে লেখা এ কথা গুলো কার্যালয়ের ভেতরে কর্মরত কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীর কাছে কাজের জন্য যাওয়া হলে তা প্রযোজ্য হয়না৷অনিয়মের মধ্যে অবৈধ অর্থের লেণদেন এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে৷ গাড়ীর ফিটনেস ও ডাইভিং লাইসেন্স এর নামে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুন অর্থ৷

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন বিআরটিএ’র নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র৷ যেখানে লাইসেন্স ফি’র দ্বিগুন তিনগুন অর্থ ব্যায় হচ্ছে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সনত্মোষটির জন্য৷ দালালদের নামে সতর্কবানী সাটানো হলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই সেবাগ্রহণকারীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ৷ শুধু প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নয় সংশ্লিষ্ট অপর কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও প্রকাশ্যে চুক্তি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার নামে হাজার হাজার টাকা৷

জানা গেছে, সমপ্রতি সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে চলমান ফিটনেস, রুট পারমিট বিহীন যানবাহন ও লাইসেন্স বিহীন চালকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ৷ এ কারনে হঠাত্‍ করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন উধাও হয়ে যায়৷ টানা কয়েকদিন সাড়াশি অভিযানে গণপরিবহন সঙ্কটে যাত্রীদের ভোগানত্মি বাড়লেও এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিকরা৷লাইসেন্স নবায়ন ও গাড়ীর ফিটনেস নেয়ার জন্য তত্‍পর হয়ে উঠে গাড়ীর মালিক ও চালকরা৷ বিআরটিএ’র তথ্যমতে পূর্বে যেখানে চালকদের লাইসেন্স নেয়ার জন্য আবেদন পড়তো মাত্র ১০-১৫টি সেখানে অভিযানের পরে প্রতিদিন আবেদন জমা পড়েছে অনত্মত ২ শতাধিক৷

এদিকে বিআরটিএ’র নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে গিয়ে দেখা গেল দুর্নীতি ও অবৈধ ভাবে অর্থ আদায় এখানে ওপেন সিক্রেট৷ লাইসেন্স পেতে আগ্রহীদের ভীড়৷ মোকতার হোসেন নামের ১৫ বছরের এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক জানালো তার লাইসেন্স করতে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে৷ সে জানালো, দালালদের সাথে কন্ট্রাক্টে না গেলে কোন কাজই হয় না৷ আর এখন যেহেতু ভীড় তাই দালালদের ডিমান্ডও বেশী৷ বিআরটিএ’র নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মোঃ মঈদুল ইসলামের কক্ষের সামনেই স্টোরকিপার রফিকুল ইসলাম কাছে নাম না প্রকাশ করে জানা গেল সাত দিনের চুক্তিতে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে ৭/৮ হাজার টাকা দিতে হবে৷ এর মধ্যে উপ পরিচালক থেকে শুরু করে সবাই বাগ পেয়ে থাকে৷

সুলতান নামের একজন গাড়ীর চালক জানায়, বাহিরে অনেক লম্বা লাইনের কারণে তাকে বাধ্য হয়েই বিকল্প অতিরিক্ত টাকা দিয়ে লাইসেন্স করতে হচ্ছে৷ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে সরকারী খরচ কত লাগে জানতে চাইলে সে জানালো একেক জনের থেকে একেক রকম নেয়া হচ্ছে৷ সরকারী খরচ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা হলেও দ্বিগুন বা তিনগুন নেয়া হচ্ছে৷ একইভাবে ফিটনেসের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে৷ বিআরটিএর লোক পরিচয়ে আগতদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করছেন দালালরা৷ ৫/৬ জনের একটি সিন্ডিকেট এ চক্রে কাজকরছে৷

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ইচ্ছুকরা জানান, ড্রাইভিং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বিআরটিএর পাশাপাশি বিআরটিসি ও সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরতরাও হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ৷ চালকেরা জানান, সরকারী কোষাগারে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা জমা পড়লেও বাকী অর্থ যাচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে৷

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, লাইসেন্স কিংবা অন্য কোন সার্টিফিকেট নিয়ে বাণিজ্যের সুযোগ নেই৷ তার অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী লাইসেন্স নিয়ে বাণিজ্য করতে পারে এমনটি তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে৷ এ ধরনের কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ তিনি আরো জানান, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযানের পরে লাইসেন্সের আবেদনের হিড়িক পড়েছে৷ অভিযানের আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ এর বেশি আবেদন জমা পড়তো না ৷ কিন্তু এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ আবেদন জমা পড়ছে৷এ কারনে কাজের চাপ