%e0%a6%a8%e0%a7%82%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a7%8c%e0%a6%a7%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%80

বঙ্গবন্ধুর খুনি এ এইচ এম বি নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে তাকে কানাডা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের যে খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভ চুরির অর্থ ফিরে পেতে সরকার খুব সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ায় সমস্যা হতে পারে এমন কিছু আমরা হতে দিতে চাই না।শনিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।আনিসুল হক বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের কাছ থেকে জানতে পেরেছি- যে অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি। সেজন্য আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে সব ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।তিনি বলেন, সম্পদ ফিরিয়ে আনার পরে কারা এ সম্পদ চুরির ব্যাপারে সাহায্য করেছে, কারা জড়িত এটি বের করাও প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি। কিন্তু সম্পদটা ফিরিয়ে আনাটা অগ্রাধিকার।

রিজার্ভ চুরির সঙ্গে কারা জড়িত এ প্রতিবেদন কয়েকদিন পরে প্রকাশ করা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যেহেতু ফিলিপাইনে একটি মামলা চলছে চুরি যাওয়া অর্থটা ফিরে পাওয়ার জন্য। ফলে এমন কিছু করতে চাই না যাতে কোনো সমস্যা হয়।সেক্ষেত্রে ওই প্রতিবেদন আগে ওই মামলাটা নিষ্পত্তি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। আমরা মনে করেছি কয়েকটা দিন পরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকবে, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ ও সার্চ কমিটি গঠন বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অপেক্ষা করেন সবই জানতে পারবেন।সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে এ রকম খবর পাওয়ার পরে আমাকে নিউ ইয়র্ক থেকে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী (এ এইচ মাহমুদ আলী) ফোন করেছিলেন।আমাদের দুজনের আলোচনার প্রেক্ষিতে এই খবরটার সত্যতা জানতে কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সেখানকার হাই কমিশনার জানান, এই সংবাদটি সর্বৈব অসত্য। তিনি তার জায়গা থেকে কনফার্ম করেছেন এটার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।আনিসুল বলেন, কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার ওই দেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি নূর চৌধুরীর আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।

এছাড়া কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কেও হাই কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে ওই সংবাদের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানান আইনমন্ত্রী।পঁচাত্তরে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া নূর চৌধুরী কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে বিচারে ফাঁসির রায় হয়।নূর চৌধুরীসহ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ছয়জন বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের ফিরিয়ে এনে দ- কার্যকরের দাবি রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা চালানোর কথাও বলা হচ্ছে।মৃত্যুদন্ড বিরোধী কানাডা নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

তবে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে আলোচনায় তাকে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজতে মতৈক্য হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।এরপর বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয় যে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা।বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বেআইনি পথে নয়, আইনি পথেই সরকার ফেরত আনতে চায় বলে জানান আইনমন্ত্রী।নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে কানাডার সংবিধানকেই সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন পেশায় আইনজীবী আনিসুল হক।কানাডার সংবিধানে বলা আছে- মৃত্যুদন্ডাদেশ যেসব দেশে আছে সেখানে কোনো আসামিকে, যার মৃত্যুদ-াদেশ হতে পারে এমন কোনো আসামিকে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই একটা পয়েন্টের উপরে নূর চৌধুরী এখনও সেখানে টিকে আছেন। এই পয়েন্টটার সুরাহা হলেই নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে কি যাবে না, সেটার সিদ্ধান্ত হবে।খুনিদের আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান আইনমন্ত্রী, যিনি নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলাটি পরিচালনা করেন।যখনই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হবে, তখনই নূর চৌধুরীর বিষয়ে কথা হবে। নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য সব সময়ই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। আমার বিশ্বাস এবারও সেই আলোচনা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।

নূর চৌধুরীর পাশাপাশি আরেক খুনি রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের খবর সরকারের জানা বলে মন্ত্রী জানান।রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জন কেরি এসেছিলেন, ওই সময় এই ব্যাপারটা উত্থাপন করেছিলাম। কেরি সাহেব বলেছেন যে, এই ব্যাপারে দেশে ফিরে খোঁজ-খবর নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।বাংলাদেশের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিলিপিন্সের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই এ ঘটনায় সরকারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে ‘অর্থমন্ত্রীকে অপেক্ষার করার পরামর্শ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার সচিবালয়ে সংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।আনিসুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সেজন্য আমরা খুব সতর্কতার সাথে সব বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেহেতু চুরি যাওয়া অর্থে ফেরত পেতে একটা মামলা ফিলিপিন্সে চলছে, সেই অর্থটা ফেরত পাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটে এমন কিছু আমরা হতে দিতে চাই না। সেই ক্ষেত্রে ওই (তদন্ত) রিপোর্টের আগে ওই মামলাটা নিষ্পত্তি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করেছি কয়েকটা দিন পরে এই রিপোর্ট পাবলিশ করলে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণœ থাকবে।

রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনার পর কারা তা চুরিতে সাহায্য করেছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করা প্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন আইনমন্ত্রী।কিন্তু সম্পদটা ফিরিয়ে আনাটা অগ্রাধিকারের ব্যাপার।গত ফেব্র“য়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে।বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।