দৈনিকবার্তা-খুলনা,৩১অক্টোবর: স্পোর্টস রূপচাঁদ সাহার কাটা খালটি আজ বিশাল রূপসা নদী৷ যা দেখে জীবনানন্দ দাশ মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙ্গা বায় / রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে৷’ সেই রূপসী রূপসার পাড়ে অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্ মহানগরী খুলনা৷ ৩ নভেম্বর এই মহানগরীর শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের সঙ্গে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে টাইগাররা৷ ভিনদেশি অতিথিদের বরণ করতে ঘষে-মেজে চকচকে করা হচ্ছে মহানগরী খুলনাকে৷ পুরোনো চেহারাকে পাল্টিয়ে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে রূপসী রূপসা পাড়ের খুলনা৷
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য আতিথেয়তার প্রস্তুতি শেষ৷ খেলোয়াড়সহ কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের থাকার আবাসস্থল, নগরীজুড়ে বিউটিফিকেশন, যেসব সড়ক দিয়ে খেলোয়াড়রা যাতায়াত করবেন তার সংস্কারসহ নগরীর গুরম্নত্বপূর্ণ সড়কগুলো গ্রামীণ অবকাঠামোর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ সবকিছুতেই যেন নতুনত্বের ছোঁয়া৷
বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র রয়্যাল মোড়ের চিংড়ি ভাস্কর্য, ময়লাপোতা মোড়ের ক্রীড়া ভাস্কর্য মৈত্রী এবং ষাটগম্বুজ মসজিদের রেপ্লিকা, নতুন রাসত্মার মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য পরিষ্কার করে নতুনভাবে রঙ করার কাজ চলছে৷ এসব স্থানে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থাসহ খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার আফিল গেট এলাকার ‘খুলনা গেট’-এ করা হয়েছে আলোকসজ্জা৷ দখলমুক্ত করা হচ্ছে ফুটপাত৷
ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরীর শিববাড়ি, ময়লাপোতা ও রয়্যাল চত্বরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি শেখ সোহেল৷ বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিল্পনগরী খুলনার প্রবেশ পথে যেদিক চোখ যাবে সেদিকেই বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে স্বাগত জানাতে তৈরি হয়েছে বড় বড় তোরণ৷ তোরণগুলো ঠাঁই পেয়েছে দুই দলের ক্রিকেটারদের ছবি৷আর শহরের প্রধান কয়েকটি স্থানে এভাবে তৈরি করা হয়েছে কৃষক, জেলে আর তার পরিবারের সদস্যদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিকৃতি৷
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ভেনু্য ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার কচির সঙ্গে৷ তিনি বলেন, উইকেট, আউট ফিল্ড পরিচর্যাসহ মাঠের সব কাজ শেষ হয়েছে৷ আধুনিকায়ন করা হয়েছে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম ও অতিথিদের হসপিটালিটি বঙ্ও৷ ড্রেসিং রম্নমে বসানো হয়েছে পর্দা৷ হসপিটালিটি বঙ্ েচেয়ারও বসানো হয়েছে৷ পূর্ব পাশের ভেঙে যাওয়া প্রায় আড়াই হাজার চেয়ার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে৷ নিয়মিত ঘাস কাটা ও রোলার দেয়া হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে নতুনভাবে এবার ১১ হাজার দর্শক চেয়ারে বসে খেলা দেখতে পারবেন৷তিনি আশা করেন, সকলের সহযোগিতা পেলে এবারও খুলনা সফলভাবে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে সক্ষম হবে৷ লাকি ভেনু্যতে টাইগাররা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে৷
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান বলেন, খেলোয়াড়দের আবাসস্থল ও স্টেডিয়ামে যাওয়া আসাসহ যেসব সড়ক দিয়ে তারা চলাফেরা করবেন, সেসব সড়কে পুরোদমে চলছে সংস্কার৷ নগরীর বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভাস্কর্যে চলছে শেষ মুহূর্তের ধোয়ামোছার কাজ৷ অভিজাত তিনটি হোটেলে অবস’ান করবেন দুই দলের খেলোয়াড়সহ ম্যাচ রেফারিরা৷ তাদের আবাসনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা জানালেন হোটেল কর্তৃপক্ষ৷ শুধু বহিরাঙ্গনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে ক্ষানত্ম হতে চাইছে না খুলনাবাসী৷
তাই অতিথিদের রসনা তৃপ্তি নিশ্চিতে রন্ধনশালায় চলছে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী ও আগতদের পছন্দের তালিকায় থাকা খাবার তৈরি৷ খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামকে বলা হয় দেশের লাকি ভেনু্য৷ এখন পর্যনত্ম এ ভেনু্যতে কোনো ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ৷ চারটি ওয়ানডে আর একটি টি-টোয়েন্টির সবই জিতেছে টাইগাররা৷ এ মাঠের উইকেট আর আউট ফিল্ডের প্রশংসা করেছেন এখানে খেলে যাওয়া দেশ-বিদেশের সব ক্রিকেটার৷ বিসিবির চিফ কিউরেটর গামা ডি সিলভা আউট ফিল্ডকে দেশের সেরা আউট ফিল্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন৷এ মাঠের সব থেকে বড় সুবিধা হচেছ ড্রেজিং সিস্টেম৷ যার ফলে বৃষ্টি হওয়ার পর খুব কম সময়েই মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে যায়৷ ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে৷ ওই বছরের ২ ডিসেম্বর হয়েছিল সর্বশেষ ওয়ানডে৷ এরপর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেছে কিন’ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আর কোনো আনত্মর্জাতিক ম্যাচ হয়নি৷
তাই দীর্ঘদিন পর খুলনার মাটিতে আসন্ন ম্যাচকে ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার৷ বিসিবি থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার খুলনা পেঁৗছেছে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল৷ বিশ্রাম শেষে শুক্রবার থেকে অনুশীলন শুরু করছে তারা৷ তাদের সঙ্গে থাকছে আইসিসির কর্তা ব্যক্তিরাও৷ জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দল ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন নিরাপত্তা প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, খেলোয়াড়রা মেহমান, তাদের নিরাপত্তা দিতে কেএমপি সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে৷