2015_316673

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ আগস্ট, ২০১৫: বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশন এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালনার জন্য ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড থাকবে। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী। ভাইস চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া একজন নির্বাহী পরিচালক থাকবেন।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারীকরণ কমিশন প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছিল না। এ জন্য আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি ব্যবসাবান্ধব হবে।প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে বেসরকারীকরণ কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৫ বছরে এই কমিশন ৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ ও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেসরকারি খাতের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি (অফলোড) করেছে। এর মধ্যে কমিশন গত চার বছরে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ ও শেয়ার অফলোড করেছে ।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেদের জানান, আইনটি জাতীয় সংসদে পাসের পর এটি কার্যকর হলে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিলুপ্ত হবে। তবে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি যাবে না। তিনি বলেন, এই আইনের আলোকে বিনিয়োগ বোর্ড এবং পাইভেটাইজেশন কমিশন একিভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এটিকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন করা হয়।প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কাজ সরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তা বিক্রি করে দেয়া। কিন্তু এ পর্যন্ত ৫৮টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। আর শেয়ার আপডেট করা হয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের। তাই এখন থেকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিক্রি না করে দক্ষতর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে পাসের পর এটি কার্যকর হলে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিলুপ্ত হবে। তবে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কোনো কর্তকর্তা-কর্মচারীর চাকরি যাবে না। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারী হবেন তারা। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে প্রচলিত আইনে সমাধান করা হবে। মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ১৯৮৯ সালে বিনিয়োগ বোর্ড আইন দ্বারা গঠিত হয়েছে। এর লক্ষ্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। বোর্ডের কাজ- নিবন্ধন, অনুমোদন, সুযোগ-সুবিধা প্রদান ইত্যাদি।২০০০ সাল থেকে গত ১৫ বছরে প্রত্যাশিত মাত্রায় ফলাফল অর্জিত হয়নি। এ পর্যন্ত দেশে ৫৮টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। আর শেয়ার আপডেট করা হয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের। সরকার অনুভব করছে প্রতিষ্ঠান লাভজনক হলে চালানো হবে। আর অলাভজনক হলে বিক্রির নিষ্ফল প্রয়োগ না চালিয়ে লাভবান কাজে অব্যবহৃত সম্পত্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। কারণ, বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন মার্জ/এমালগেমেট করা। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের জন্য এ কমিটি আইনের খসড়া করবে এবং প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম তৈরি করবে। কমিটি দু’টি কাজই করেছে। আমরা (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) খসড়া করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তার উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের কাছে পাঠিয়েছিলেন। খসড়াটিকে ভিত্তি ধরে তা পরিমার্জন করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা আজ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে পাসের পর আইন কার্যকর হলে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিলুপ্ত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৭ সদস্যের এই বোর্ডে কৃষিমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রীসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। আর ছয়জন থাকবেন অন্য সদস্য।সর্বমোট ১৭ সদস্য নিয়ে এই বোর্ড গঠিত হবে ।

এদিকে, ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত সব প্রতিষ্ঠান ও জনবলের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ সরকারের দেওয়া অর্থ পরিষদের তহবিলে জমা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ২০১১ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৯৮ সালের আইনের ৩৫ ধারায় বলা আছে, উপজেলা পরিষদ তহবিল কীভাবে গঠিত হবে। এখানে দুটি বিষয় রয়েছে; একটি- হস্তান্তরিত বিষয়। উপজেলা পরিষদকে হস্তান্তর করতে হবে। দ্বিতীয়টি সংরক্ষিত বিষয়, যা সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত হবে। আইনের ৩৫ ধারায় বলা আছে- ‘কর, রেট, টোল, ফিস এবং অন্যান্য দাবি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, পরিষদের ওপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত আয় বা মুনাফা, পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠান বা কর্ম পরিচালনাকারী জনবলের বেতন ভাতা এবং এতদ্সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ বাবদ সরকার প্রদত্ত অর্থ সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুদান পরিষদের তহহিলে পরিশোধ করতে হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখন বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন দেওয়া হলো। এর আগে হস্তান্তরিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় অধিদফতরের জনবলের বেতন নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর নির্বাহ করতো। এখন থেকে হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠানের জনবলের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় উপজেলা পরিষদের তহবিলে জমা হবে। এসব জনবলের বেতন কাঠামো পরিশোধ করবে উপজেলা পরিষদ তহবিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনে বলা আছে, এটি বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।