Brazilian President DILMA & Bangladeshi diplomacy

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩০অক্টোবর: দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্বেও ব্রাজিলের পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফকে অভিনন্দন জানাননি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ আমেরিকার সবচাইতে প্রভাবশালী এই দেশটিতে ২৬ অক্টোবর রোববার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দিলমার ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিশ্বনেতারা তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেও কৃপনতা করেছে বাংলাদেশ। উভয় দেশে স্ব স্ব দূতাবাস থাকা সত্বেও ঢাকার তরফ থেকে কূটনৈতিক উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্রাজিল প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

‘ল্যাটিন আমেরিকান ইকোনমিক জায়ান্ট’ তথা এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক পরাশক্তি ব্রাজিলে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। ক্রমশঃ বাড়ছে তাদের আগমন। ২০১০ সাল থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা দিলমা রৌসেফ তাঁর সমাজকল্যাণ নীতির কারণে দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের প্রতিও সবসময় সুদৃষ্টি ছিল দিলমা প্রশাসনের। সঙ্গত কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই নারীর প্রতি অভিবাসী বাংলাদেশিদেরও রয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

ঢাকায় রয়েছে ব্রাজিলীয় দূতাবাস। বাংলাদেশ সরকারের ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’ পলিসিকে সফল করার পথ প্রশস্ত করতে ২০১২ সালের জুনে ব্রাজিলেও আলোর মুখ দেখে অত্যন্ত গুরুত্ববহ বাংলাদেশ মিশন। দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মেধাবী কূটনীতিক শামীম আহসানের সক্রিয়তায় আরএমজি তথা বাংলাদেশে তৈরী রেডিমেইড গার্মেন্টসের চমৎকার বাজার ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশ মেইড টি-শার্ট, শর্ট-পেন্ট সহ আরো বেশ কিছু আইটেমের ব্যাপক চাহিদা ব্রাজিলের বাজারে।

দেশটিতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বাংলাদেশের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের রফতানি বানিজ্য। চলতি বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে গোটা ব্রাজিল জুড়ে বয়ে যায় ‘মেইড ইন আংলাদেশ’-এর জোয়ার। ২০১৬ সালে এই ব্রাজিলেই আবার আসছে অলিম্পিক গেমসের মহাধুমধাম। ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকার সমন্বয়ে গড়া আন্তঃমহাদেশীয় অর্থনৈতিক ফোরাম BRICS (ব্রিক্স)-এর অন্যতম দেশ ব্রাজিল। সারা বিশ্বের মানুষের উৎসাহ-আগ্রহ এখন ব্রিক্সকে ঘিরে।

সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলেই অনুষ্ঠিত হয় ব্রিক্স সামিট, যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে বহুল আলোচিত ব্রিক্স ব্যাংক। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিক্স ব্যাংকে যোগদানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইতিমধ্যে। সব মিলিয়ে দিনকে দিন বাড়ছে রাজধানী ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের গুরুত্ব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রাজিল সহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো আগামী দিনে হবে বাংলাদেশের বৈধ জনশক্তির নিশ্চিত ‘ডেস্টিনেশন’। রফতানী বানিজ্য বহুগুনে বাড়াও সময়ের ব্যাপার।

ব্রাজিলের সাথে দ্বিপাক্ষিক এবং ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে বহুপাক্ষিক সম্পর্কের আকাশচুম্বি ‘প্রসপেক্ট’কে সামনে রেখে সফল কূটনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসকে অতি সম্প্রতি ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সরকার। কয়েক বছর আগে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্বপালনকালীণ সময়ে তাঁর নেতৃত্বেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কর্তৃক ল্যাটিন আমেরিকার ৯টি দেশে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’-এর সফলতার প্রেক্ষিতে ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ দূতাবাস।

‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’র মূলমন্ত্রে ‘এক্সপোর্ট বাস্কেট’ সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত করতে ব্রাজিলে ইতিমধ্যে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস। ব্রাজিল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কে নবদিগন্তের সূচনা করতে বাংলাদেশের তরফ থেকে আরো ‘সিরিয়াস’ হবার যখন সময়, ঠিক তখনই পরপর দ্বিতীয মেয়াদে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফকে বাংলাদেশের তরফ থেকে অভিনন্দন না জানাবার প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা।

রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভের পরদিন অর্থাৎ সোমবারের মধ্যেই সারা বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অভিনন্দিত করেন ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টকে। প্রসঙ্গত, সোমবার দুবাই থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানান বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য। মরুপ্রান্তর থেকে বাংলাদেশ টিমের সাথে ফোনেও কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি আরেকটি ফোন ব্রাসিলিয়াতে দিতেন, তবে কি মহাভারত অশুদ্ধ হতো ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী হয়ে কি পারতেন না বিশ্বের প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে দিলমা রৌসেফকে অভিনন্দন জানাতে ? কার কানে কে দেবে পানি ?