ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো চুক্তি হলে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না।বিএনপিও দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে আপস করবে না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপির এক প্রস্তুতি সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রা সফল করার লক্ষ্যে ওই সভার আয়োজন করা হয়।বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে যে বিষয়গুলো আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কী চুক্তি সই হবে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যা প্রকাশিত হচ্ছে, তা উদ্বেগের।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তিস্তা চুক্তি না হলে কোন চুক্তি হবে?সরকার রাজনৈতিকভাবে জঙ্গিবাদ ব্যবহার করে বিএনপিকে ঘায়েল করতে চায় বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সব দল ও মতের মানুষকে এক করতে হবে। অথচ অবস্থা এমন যে জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলা যাবে না। কোনো ঘটনা ঘটলেই বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।তিনি বলেন, আমরা এখন স্বাধীন আছি কিনা- এটা এখন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের তো ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে। এখন যেটাকে আমরা বলি জিওগ্রাফিকেল ফ্রিডম, সেটাও হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সমগ্র জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমরা জানি না, প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন, কি কি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন, এটা জনগণকে জানানো হয়নি, জনগণ জানে না।পত্র-পত্রিকাগুলোর মধ্যে যে স্পেকুলেশনগুলো হচ্ছে, যেটা বলা হচ্ছে। এটাতে আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, যারা আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি, আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না।নয়া পল্টনে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘোষিত শোভাযাত্রা সফল করার লক্ষ্যে এই প্রস্তুতি সভা হয়।আগামী ৭ এপ্রিল তিন দিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন।

বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পানি সমস্যা রয়েছে, যেটা আমাদের প্রধান সমস্যা তার সমাধান হওয়ার দরকার। আমাদের যে তিস্তা নদীর পানির চুক্তি এখনো হয়নি।গঙ্গার নদীর পানি বণ্টন চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া ও ৫৪টি নদীর পানি নিয়ে চুক্তি না হওয়ার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

অন্যদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রীর মুখে আমরা শুনতে পাই, তিস্তা নদীর পানি চুক্তি হবে কি না সে নিয়ে তিনি সন্দিহান। তাহলে কোন চুক্তি হবে?স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালি শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাচিব।সভায় বিএনপির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২৬ মার্চ দুপুর ২টায় নয়া পল্টন থেকে বর্ণাঢ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে এই র‌্যালি শুরু হবে।

আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক সাংসদ আলহাজ¦ সালাহউদ্দিন আহমেদ, মহানগর নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা ও মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু উপস্থিত ছিলেন।