Small-Factory-150x150

দৈনিকবার্তা-নীলফামারী, ২৪অক্টোবর: ঝুট কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রায় সহস্রাধিক পরিবার৷ দেশের বাজার দখল করে এসব পোশাক এখন যাচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে৷ নীলফামারী জেলার সৈযদপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মুন্সিপাড়া, পুরাতন বাবুপাড়া, গোলাহাট, ঘোড়াঘাট, বাঁশবাড়ি, নিয়ামতপুরসহ আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ২২টি ক্যাম্পে বাড়ি বাড়ি গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা৷ প্রতিটি কারখানায় সর্বনিম্ন ২টি থেকে সর্বোচ্চ ৪৫টি মেশিন রয়েছে৷

পুঁজিবিহিন খুব ছোট্ট পরিসরে বাড়ী সংলগ্ন সৈয়দপুর গার্ডপাড়ায় মাত্র দুটো সাধারন মেশিন দিয়ে ১৯৯৮ সালে দু’ভাই মিলে কাজ শুরু করেছিলাম৷ হাসি মুখে কথাটি বললেন রপ্তানিমূখী ক্ষুদ্র রিতিসা গার্মেন্টেসের স্বত্বাাধিকারী মো: শাহীন আকতার৷ তিনি এবং তার বড় ভাই রেয়াজ আলম বাবু দুজনে মিলে গার্মেন্টস এর উচ্ছিষ্ট ছাট কাপড়গুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগাড় করে এনে মোবাইল থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরী করে এলাকার গ্রাম-গঞ্জের চাহিদা মেটাতেন৷ পরবতর্ীতে যখন এর ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়, তখন দুটি আরো মেশিন কিনে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমে লেগে যায় দু’ভাইসহ আরো দুজন কারিগর৷ ধীরে ধীরে ছোট্ট এ সেলাই কারখানার চাহিদা বাড়তে থাকে৷ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তৈরীকৃত এ মোবাইল প্যান্ট পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারতের মুম্বাই শহর, কোলকাতার শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িসহ নেপাল এবং ভূটানে এ পোষাক রপ্তানি শুরু করে৷

সৈয়দপুরের এ উত্‍পাদিত পন্য ওইসব দেশে যখন ব্যাপক চাহিদা দাঁড়ায়, তখন এ মিনি গর্ােমন্টসগুলো পুঁজির অভাবে দিক বেদিক হতে থাকে৷ ঠিক তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড: আতিয়ার রহমানের চোখে পড়ে৷ ২০১১ সালে তিনি তার অনান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সৈয়দপুরের এ কারখানাটি পরিদর্শন করেন৷ ওই সময় সৈয়দপুরে এ রকম আরো অন্যান্য কারখানার উদ্যোক্তাদের নিয়ে তিনি কথা বলেন এবং তাদের সমস্যার কথা শুনেন৷ কারখানাগুলো পরিদর্শনের অল্পকিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুদ শতকরা ৯ টাকা হারে মডগেজ ছাড়াই ৩৫জন উদ্যোক্তাদের মাঝে এসএমি ফান্ড থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিতরন করেন৷ এ সময় শাহীন এবং বাবুসহ অনান্যরাও সাধারন মেশিন সরিয়ে একাধিক আটো মেশিনের ব্যবস্থা করে এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানও বেড়ে যায়৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঝুট কাপড় ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন দেখে সৈয়দপুর রপ্তানিমূখী ক্ষুদ্র মালিক গ্রুূপের মধ্যে আরো ছোট ছোট উদ্যোক্তাকে একত্রিত করে ৮০জনের মধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরন করেন৷

ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি পোষাক ও রপ্তানিমূখী ক্ষুদ্র মালিক মো: শাহীন আকতার বলেন, আমরা ঝুট কাপড়কে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে নিজেদের ডিজাইনে মানসম্পন্ন পোষাক তৈরী করে সস্তা দামে লোকাল চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে আছি গর্বের সাথে৷ তিনি একটি সরকারি জরিপের উদ্ধৃত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ হতে যত পোষাক ভারতে রপ্তানী হয় তার মধ্যে র্অেধকেরও বেশী সৈয়দপুরের তৈরি পোষাক রয়েছে৷ তিনি বলেন, আমরা যে পরিমান বিদেশ হতে দেশে রেমিটেন্স আনছি বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের আরো একটু নজর দেয়া উচিত্‍ বলে অনান্য ব্যবসায়ীরাও মনে করেন৷ বর্তমানে এ দুভাইয়ের প্রত্যেকের নিজস্ব একটি করে আলাদা কারখানা প্রয়োজন এবং প্রত্যেকটি কারখানায় ৫০টি করে আটো মেশিন রয়েছে৷ যেখানে পুরুূষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী৷ তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের এ সময় কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দেয় তাহলে আমাদের আরো অনান্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সাধারন মেশিন পরিহার করে আটো মেশিনে পোষাক তৈরী করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাফল্যের অবদান দ্রুূত রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন৷

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, এ সমস্ত পোষাক কারখানা সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ সরকার যদি এদের নির্দিষ্ট একটি বড় জায়গা স্থায়ী বরাদ্দ দিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন তাহলে অর্থনীতির মান উন্নয়নের সাথে পরিবেশেরও উন্নয়ন সাধিত হবে৷ এটি হলে বিদেশী বায়ার সরাসরি এ ঝুট কাপড় তৈরী কারখানায় এসে তাদের মনমত পোষাকের র্অডার দিতে পারবে বলে তিনিসহ অনান্য ব্যবসায়ীগণ মনে করেন৷

সৈয়দপুর রফতানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান দুলু জানান, তারা ঢাকার মিরপুর, কালিগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, টঙ্গী, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বড় বড় পোশাক কারখানাগুলো থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে এনে ট্রাউজার, জ্যাকেট, টি-শার্ট, শর্ট প্যান্ট, মোবাইল প্যান্ট ইত্যাদি তৈরি করে দেশের বাজার দখল করে নিয়েছে৷ এমনকি তৈরিকৃত এসব পোশাক পাঠানো হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে৷ তিনি বলেন, সৈয়দপুরের বাণিজ্যিক শহরে প্রায় ২২টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে৷ এসব ব্যাংক সহজ শর্তে ঋন প্রদান করলে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকরা উপকৃত হবে এবং এর সম্প্রসারণ আরও ঘটবে বলে আশা করেন তিনি৷