image_250427.citmohol-jorip

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ জুলাই: মোমবাতি, প্রদীপ আর মশালের আলোয় ছিটমহল হস্তান্তরের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহলের বাসিন্দারা।এ উপলক্ষে ছিটমহলবাসী এবং ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বর্ণাঢ্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দীর্ঘ ৬৮ বছর অবরুদ্ধ জীবনের অবসানে এ দিন ছিটমহলের প্রত্যেকটি মুসলিম পরিবারে জ্বলবে ৬৮টি মোমবাতি আর হিন্দু পরিবারগুলো জ্বালাবে ৬৮টি প্রদীপ। ছিটমহলের সড়কগুলোকে আলোকিত করা হবে।

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, দীর্ঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটবে সেই লক্ষ্যে আগামীকাল মধ্যরাতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ছিটমহলবাসী। মহানন্দের সেই মুহূর্তটির জন্য সময় যেন কাটছেনা তাদের। আর ১দিন পরই তারা পেয়ে যাবে নাগরিকত্ব। আনন্দ উৎসবের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে তারা। আগামীকাল ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহল হস্তান্তর হবে। ভারতের পক্ষে কুচবিহার জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকদের মধ্যে এই হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের মধ্যে ১১১ ছিটমহল এবং ভারতে ৫১ ছিটমহল হস্তান্তর উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা প্রতিযোগিতা, মঞ্চ নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির পর থেকে দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলের নাগরিকত্বহীন মানুষ নিজের পরিচয় আর একটি দেশের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলের বন্দী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সংগে প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর এবং ঢাকায় ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাস্থল সীমান্ত চুক্তি বিলে স্বাক্ষর করায় দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলে বসবাসকারী রাষ্ট্রহীন মানুষগুলো তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পায়।পঞ্চগড়-নীলফামারী অঞ্চলের ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মফিজার রহমান জানান, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৩১ জুলাই সারাদিন সারারাত ব্যাপী আনন্দ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আজম জানান, ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের অধিবাসীরা বাংলাদেশী এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের অধিবাসীরা ভারতীয় হয়ে যাবে। যারা নাগরীকত্ব বদলের আবেদন করেছেন তাদের বিষয়গুলো ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুরাহা হবে।

কুড়িগ্রাম জানান, বিজয় উৎসব পালনের জন্য ছিটমহলে এখন চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। বাংলাদেশী নাগরিক হবার আনন্দে মাতোয়ারা এখন ছিটমহলবাসী।আগামীকাল ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় হবার সাথে সাথে উৎসবে মেতে উঠবে ছিটমহলবাসী। পরদিন দিনভর চলবে সেই উৎসব।

এ উৎসবে শামিল হবেন ছিটমহলের শিশু, নারী, বৃদ্ধরাও। আলোকসজ্জা, মশাল ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, সমাবেশ, মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধুলা, নৌকা বাইচসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে উৎসব। নতুন পতাকা তৈরী, মশাল তৈরী, মোমবাতি ক্রয়সহ নানা প্রস্ততিতে ব্যস্ত এখন ছিটমহলবাসী।

বিজয় উৎসব পালনের জন্য বুধবার থেকে দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারের কাছে মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামীকাল সন্ধ্যায় ভারতের পতাকা নামানো হবে। আর বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হবে আগামী ১ আগষ্ট।বৃহষ্পতিবার টংকার বাজার, কামালপুর, ছোট কামাত গ্রামে পৃথক মঞ্চ করা হয়েছে। আর বিজয় মঞ্চ করা হয়েছে কালিহাটে।

দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে ১০টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও ¯’ানীয় রাজনীতিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, ছিটমহলবাসীদের ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে।এদিকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ছিটমহল হেডকাউন্টিং পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের তত্তাবধানে জেলার ৩৬টি ছিটমহলে ১৮টি ক্যাম্পের মাধ্যমে ৬ জুলাই থেকে জনগণনা কাজ শুরু হয়ে ১৬ জুলাই শেষ হয়।

এর মধ্যে ভারতে যাওয়ার জন্য ৪৬৭ জন আবেদন করে। হেডকাউন্টিং এর শেষ দিনে আরো ১৬টি পরিবারের ৫৯ জন ভারতে যাওয়ার জন্য পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক এর বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত কোটভাজনী ছিটমহলের নতুন হাজীর হাট অস্থায়ী ক্যাম্পে ভারতে যাওয়ার জন্য নতুনভাবে যারা আবেদন করেছিলেন তাদের যাচাই বাছাইসহ মতামত নেয়া হয়।