সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নানসহ যে জঙ্গি যে কারাগারে আছেন, সেই কারাগারেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। কারা অধিদফতরের আইজি (প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘জঙ্গিদের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছেছে। এরপর তাদের জঙ্গিদের পড়ে শোনানো হয়েছে। তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কারাকর্তৃপক্ষও সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’

আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের মৃত্যু পরোয়ানা প্রথমে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানো হয়। সেখান থেকে সিলেট কারাগারে রিপনের মৃত্যু পরোয়ানা সিলেট কারাগারে এবং মুফতি হান্নান ও বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগীর মিয়া দৈনিকবার্তা কে বলেন, ‘আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়েছি। আইন ও কারাবিধি অনুযায়ী জঙ্গি রিপনের ফাঁসি কার্যকরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রিপনের ফাঁসি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেই কার্যকর করা হবে।’

এদিকে কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুর রহমান দৈনিকবার্তা কে বলেন, ‘মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কোথায় কার্যকর করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। তবে আইন ও বিধি অনুসরণ করে সব প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’ তবে, কাশিমপুর কারাসূত্র জানায়, মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি হাই সিকিউরিটি জেলেই কার্যকর করা হবে। এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের মতো ঝুঁকি এই মুহূর্তে কারাকর্তৃপক্ষ নেবে না। কারণ, ইতোমধ্যেই মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজনভ্যানে হামলাসহ জঙ্গিরা কয়েকদফা চেষ্টা চালিয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা জানান, আসামিরা চাইলে নিজেদের দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে তাদের মৃত্যুদণ্ডি কার্যকরে আর কোনও বাধা থাকবে না। তারা আরও জানান, মুফতি হান্নান ও বিপুল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন বলে এরইমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রা.) এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালালে তিন জন নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং জঙ্গি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তাদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি রায় প্রকাশের পর আসামিরা ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। গত রবিবার (১৯ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রেখে রিভিউ খারিজ করে দেন।