president-abdul-hamid

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ,২৭ নভেম্বর: ষাট বছর ও তার বেশি বয়সীদের দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যারা এ সমাজ গড়ছেন, তাদের শেষ জীবন স্বস্তিময় করতে সন্তানদেরেই দায়িত্ব নিতে হবে৷এই ঘোষণার ফলে বাংলাদেশের ১ কোটি৩০লাখ নাগরিক বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন৷জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বল্পমূল্যে ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বাস্থ্য, আবাসন ও যানবাহনের সুবিধা পাবেন৷

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবীণদের সম্মান জানানোর জন্য এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের সকল সম্মানিত প্রবীণকে সিনিয়র হিসেবে ঘোষণা করছি৷ সাথে সাথে তাদের সুস্বাস্থ্য, মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি৷তিনি বলেন, পরিবারই প্রবীণ নাগরিকের সবচেয়ে স্বস্তিময় ও নিরাপদ স্থান৷ এ কারণে পরিবারে যাতে প্রবীণ ব্যক্তিরা স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদার সাথে অন্য সদস্যদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, তার দায়িত্ব সন্তানদের নিতে হবে৷

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নির্ধারিত দিনে ফাদারস ডে বা মাদারস ডে উদযাপন না করে বাংলাদেশে প্রতিটি দিন প্রতিটি পরিবারে প্যারেন্টস ডে’ উদযাপিত হবে- বিশ্ব প্রবীণ দিবসে এ প্রত্যাশাও করেন রাষ্ট্রপতি৷বয়স্কদের প্রতি সম্মান দেখানোর ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের গুরুজন এবং পথ প্রদর্শক৷ তাদের যথাযথ মর্যাদা, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিত্‍সা, বসবাসের সুবিধাসহ সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে৷ এ জন্য আমাদের ঐতিহ্যগত পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে৷ পাশাপাশি শৈশব থেকেই শিশুদের গুরুজনদের সম্মান করার সুমহান শিক্ষা দিতে হবে৷ কারণ এটাই আমাদের চিরকালীন ঐতিহ্য৷

প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বীকৃতি দিতে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করে সরকার৷ এরপর জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে৷রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানসহ তাদের যত্ন নেওয়া ছিল আমাদের প্রচলিত মূল্যবোধের ঐতিহ্যগত অংশ৷ কিন্তু বর্তমানে আর্থ-সামাজিক নানা কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে৷ প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতি কমছে, বাড়ছে অবহেলা, তারা শিকার হচ্ছেন নানাবিধ বঞ্চনার৷

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে প্রবীণরা নিজ পরিবারেই ক্ষমতা ও সম্মান হারাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে একাকিত্ব জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন ৭০ বছর বয়সী আবদুল হামিদ৷আর্থিক দীনতার পাশাপাশি চিকিত্‍সা সুবিধা বঞ্চিত অনেক প্রবীণ আজ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি৷ সমাজের এই বিপুল প্রবীণ অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব৷

রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ ভাগ, অর্থাত্‍ ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক প্রবীণ৷ আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ এবং ২০৫০ সালে প্রায় ৪ কোটি৷ ২০৫০ সাল নাগাদ এ দেশের প্রায় ২০ শতাংশ নাগরিক হবেন প্রবীণ৷এই হিসাবে আগামীতে দেশের আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বার্ধক্যই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ আপনারা জানেন, প্রবীণদের প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামে বসবাস করছেন৷ তাদের সুস্থ ও স্বস্তিময় জীবন যাপনের জন্য পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন৷প্রবীণদের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের অবদান অপরিসীম৷ জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে তারা যাতে মর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারেন, তার সকল ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে৷ হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস, আদালতসহ নাগরিক সেবার সর্বক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে৷রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে প্রবীণদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠগুলোকে এ কাজে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান, সমাজকল্যাণ সচিব নাছিমা বেগম, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব এ এস এম আতীকুর রহমান বক্তব্য দেন৷