নৌবাহিনী জাহাজ বঙ্গবন্ধু

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলংকায় জরুরি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বঙ্গবন্ধু’ আজ মঙ্গলবার যাত্রা করেছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধসসহ আকস্মিক বন্যায় সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ১০০ টন জরুরী ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে জাহাজটি। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দুর্যোগের এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলংকার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ বঙ্গবন্ধু কলম্বোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে।

জাহাজটি মঙ্গলবার বেলা ১টায় শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম নৌ জেটি ত্যাগ করে। এসময় উপস্থিত ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কবির তালুকদার, এয়ার কমডোর এ এইচ এম ফজলুল হক ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সামরিক ও বেসামারিক দপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর নাজমুল হাসান এবং শ্রীলংকান হাইকমিশনার ইয়াসুজা গুনাসেকারাসহ নৌবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকতাগণ জাহাজটিকে বিদায় জানান। নৌ জেটি ত্যাগ করার আগে এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার এডমিরাল আখতার হাবীব উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’ দ্রুততম সময়ে প্রায় ১৪’শ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে আগামী ৩ জুন শ্রীলংকা পৌঁছাবে। শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে অবস্থান করে পরবর্তী ৩ দিন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবে। এছাড়া যেকোন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সময় পরিবর্ধনের প্রয়োজন হলে তা মোকাবেলার সক্ষমতা জাহাজটির রয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীসমূহের মধ্যে রয়েছে- বিশুদ্ধ পানি, ওয়াটার পিউরিফায়ার, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, বস্ত্র, তাঁবু, জেনারেটর ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নৌবাহিনী জাহাজ বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে জরুরী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের এ উদ্যোগ শ্রীলংকার জনগণের মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শেষে জাহাজটি আগামী ১০ই জুন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যেকোন দুর্যোগের মুহূর্তে বাংলাদেশ অতীতে বরাবরই এগিয়ে এসেছে। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা দুই দেশের মধ্যকার পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া এর মধ্য দিয়ে দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতাও প্রমাণিত হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দূর্যোগকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই ত্রাণ কার্য পরিচালনা বাংলাদেশের বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতিরই উজ্জ্বল প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু শ্রীলংকার উপর দিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল হয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে আঘাত হানে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রীলংকা। এ সময় দেশটিতে বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়। এর ফলে শ্রীলংকার ২৫ টি জেলার মধ্যে ১৯টি জেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। অতিবৃষ্টিতে ভূমিধ¡সসহ আকসি¥ক বন্যায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। টানা প্রবল বর্ষণে শ্রীলংকার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির মধ্যাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শ্রীলংকার সরকারী পরিসংখ্যান মতে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ষোল হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে দেশটিতে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ২৫ মে শ্রীলংকা সরকার আন্তর্জাাতিক সহায়তার আহ্বান জানায়।