Prime-Minister20140717165036

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩০অক্টোবর: গত নির্বাচনে বিএনপিকে আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তনি বলেন,যে কোন সময় নির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকে৷ একটি নির্বাচন যখন হয়েছে আরেকটি নির্বাচন হবে৷ নির্বাচন সময় মতোই হবে৷

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গে একথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সফলতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে হয়েছে৷ নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ব্যবস্থা নিলেও তারা তা বানচালের চেষ্টা করেছে৷ সরকারের মেয়াদ শেষের আগে কোন নির্বাচন হবে না৷শেখ হাসিনা ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের প্রশাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে আমিরাত সফর করেন৷

আরব আমিরাত সফর সফল হয়েছে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, দুবাইয়ে নারী শ্রমিক নিয়োগে কোন টাকা লাগবে না৷ নারী শ্রমিকদের সব রকমের নিরাপত্তা দেবে সরকার৷জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামির রায় নিয়ে ইইউ এর বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মানবাধিকার লংঘনকারীদের পক্ষে সব সময় উদ্বেগ জানাবে৷ তাদের জানা উচিত এ বিচার হচ্ছে আমার দেশের আইন অনুয়ায়ি৷ এটি আন্তর্জাতিক মানের বিচার৷ তাদের এ উদ্বেগ কোথায় ছিল যখন গাজায় নারী-শিশু হত্যা করা হয়েছিলো৷ তখন তারা কেন উদ্বেগ জানায়নি৷

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিচার চলছে৷ যুদ্ধে যারা বাংলাদেশের নারী-পুরুষকে হত্যা করল, গ্রামের গ্রামের পর জ্বালিয়ে দিল, তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে৷ মানবতাবিরোধীদের শাস্তি দিলেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ ১৯৭১ সালে মানুষ হত্যা করে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নাই৷ যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের পক্ষে তাঁরা (ইইউ) উদ্বেগ প্রকাশ করেন কীভাবে৷ এ সময় প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ফিলিস্তিনের নারী ও শিশুদের ইসরায়েল হত্যা করে তখন ইইউর মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ কোথায় ছিল?
আরব-আমিরাত সফর ব্যর্থ, বিএনপির এমন দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা প্রতি পদে পদে ব্যর্থ, তারা এমনভাবেই সবকিছুকে দেখবে৷ তারা তো বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়েছিল৷ তারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নির্বাচন বানচাল করতে না পেরে এমন কথা বলছে৷শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ৫ জানুয়ারির এ নির্বাচনটা আমাদের করতে হয়েছে৷ বিএনপি যাতে নির্বাচনে আসে সেজন্য সব রকম পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম৷ সব চেষ্টা করার পরও তারা নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন মানেনি এমনকি নির্বাচনে আসবে তো না, আবার নির্বাচন হতেও দিবে না এটাই ছিল তাদের প্রচেষ্টা৷এসময় সাংবাদিকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন না হলে কি হতো? একবার তো ১/১১ ধাক্কা সবাইকে সামাল দিতে হয়েছে৷ কাজেই সেই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা (বিএনপি) আনতে চেয়েছিল৷ একটা নির্বাচন হলে তার পরবর্তীতে আরেকটা নির্বাচন তো আসবেই৷ এটা খুব সাধারণ কথা৷ এটা অন্যভাবে বোঝার কিছু নেই৷

যখন গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকে, সেখানে কিন্তু একটা নির্বাচন দেয়ার অধিকার সরকারের থাকে৷ এটা দিতে পারে৷ অনেকেই হয়ত একটা আগাম দেন আবার অনেকেই হয়ত সময় পূর্ণ করে দেন৷ জনগণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে ৫ বছরের জন্য নির্বাচন করে এটা ঠিক৷ ৫ বছর একটা সরকার রাষ্ট্রপরিচালনা করবে, বাংলাদেশে একমাত্র দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগ সরকার স্থাপন করেছিল, সেটা ১৯৯৬- ২০০১ সাল পর্যন্ত সময় পূর্ণ করা৷ এর পূর্বে কোনো সরকার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি৷ সাংবিধানিকভাবে আমাদের সরকারের মেয়াদ ৫ বছর৷ নির্বাচন সময় মতোই হবে৷ একটা নির্বাচন যখন করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবে আরেকটা নির্বাচন আসবেই৷ যে যার মতো করে বুঝে নিন, জানান শেখ হাসিনা৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য নির্বাচন করতে হয়েছে৷ নির্বাচনে বিএনপিকে আনার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিলাম৷ কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশ তো নেয়নি বরং নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাত তুলে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃতু্যদন্ডাদেশের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, দেশের আইন অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার ও শাসত্মি দেয়া হবে৷

তিনি বলেন, তারা সবসময়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অধিকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে৷ তাহলে কিভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে ?শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে এবং মানবাধিকার রক্ষা করা হবে৷ এ জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নতুন কিছু নয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে৷ তাদের বয়স ৯০ অথবা ১শ’ বছর৷ সে জন্য কি তাদের বিচার থেমে আছে ?

তিনি বলেন, তারাই সঠিক, আমরা নই৷ তিনি প্রশ্ন করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা কোন অপরাধটি করেনি ? তারা ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগি্নসংযোগ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ সবকিছুই করেছে৷ নিজামী কি ছিল, তা সবাই জানে শেখ হাসিনা বলেন, ইইউ’র জানা উচিত, দেশের আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে৷ ট্রাইবু্যনাল আনত্মর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী কাজ করছে এবং সকল আনত্মর্জাতিক আইন বজায় রেখে বিচার কাজ চালাচ্ছে৷জঙ্গিবাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি তত্‍পরতা বাংলাদেশে ছিল, এটা ঠিক৷ কিন্তু আমরা সেটা বন্ধ করেছি৷ ভারতের পত্রিকার মধ্যমে জানলাম, তারা নাকি এখন ভারতে৷ এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আমাদের তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে৷ জঙ্গি তত্‍পরতা রোধে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একমত এবং আমরা একে-অপরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি৷নিজের জীবনের হুমকি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ আমি তো আছি এঙ্টেনশনে৷ এ সময় তিনি একাত্তর ও পঁচাত্তরসহ বিভিন্ন সময়ে তার ওপর হামলার কথা উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, আমি আমার নিজের চোখের সামনে গুলি হতে দেখেছি৷ বোমার মারতে দেখেছি৷

পশ্চিমবঙ্গে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে হত্যার যে জঙ্গি তত্‍পরতা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এদেশে জঙ্গি তত্‍পরতা ছিল আমরা তা বন্ধ করেছি৷ উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ আমি উদ্বিগ্ন বোধ করি না৷ অনেক আগেই মারা যাওয়ার কথা ছিল, ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছি৷বাংলাদেশের জনগণের জন্য যতটুকু করার তৌফিক আল্লাহ দিয়েছেন ততটুকু না করে আমি মারা যাব না বলেও জানান তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্মালে মরতে হবে৷ আমি সেটাই মানি৷ জীবন দিয়েছেন আল্লাহ নেবেনও তিনি৷ আমি তো আমার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই৷

সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী৷বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ যেদিন করব সেদিনই আমার ছুটি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷জমি বিক্রি করে বিদেশ না গিয়ে সেই টাকায় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছি৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবেশ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে জটিলতা নিরসনে আমিরাতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টি হয়েছে৷ একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিজ দেশে পাঠানো, আরব আমিরাতের দূতাবাস ভবন নির্মানের বিষয়৷ তবে এ দূতাবাস নির্মানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্লট দেয়া হবে বলেও তিনি জানান৷প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, নিরাপত্তার মধ্যে সাইবার ক্রাইম, জালিয়াতি, সন্ত্রাস ও অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷ দণ্ডপ্রান্ত আসামিদের মধ্যে দুই দেশে কোনো ব্যাক্তি কোনো অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদেরকে নিজ দেশে সাজা ভোগ করার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে৷

এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে উপ রাষ্ট্রপতি নাহিয়ানের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে৷ এ বৈঠকে পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মানসহ বিভিন্ন আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাহিয়ান মরুভূমিতে বসে কবিতা লেখেন৷ আমি তাকে বর্ষার সময় বাংলাদেশে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ এদেশের বৃষ্টিকে নিয়ে কবিতা লেখার আহ্বান জানিয়েছি৷

গৃহকর্মী নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আরব আমিরাত সরকার ও বিএমইটির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে৷ এর মাধ্যমে ১৪টি পেশায় ১ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷এছাড়া রাংগুনিয়াতে পাহাড়ের উপর একটি জমি রয়েছে৷ আরব আমিরাত সেখানে কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুপক্ষের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে জয়েন্ট স্টেটমেন্টও হয়েছে৷ দুদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করতে আমরা আলোচনা করেছি৷ বিশেষ করে জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি৷তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সেখানকার জনগণ ও সরকার বাংলাদেশিদের কর্মদক্ষতা ও সততার পপ্রশংসা করেছেন৷বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সে দেশের সহযোগিতা বজায় থাকবে বলে আরব আমিরাত বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে এবং সন্ত্রাসবাদ মোবাকেলায় দুদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷