1431856986

দৈনিকবার্তা-লন্ডন, ২২ মে: শর্ত মোতাবেক পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তত্‍কালীন ইষ্ট বেঙ্গল এন্ড আসাম গভর্মেন্টের লিখিত আদেশে ঢাকা নিবাসী নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরকে অযোগ্য ভুম্যাধিকারী ঘোষনা করত: ১৯০৭ সালের ১০ই আগষ্ট ইষ্ট বেঙ্গল এন্ড আসাম গেজেটে ঢাকা নওয়াব এস্টেটের প্রায় ২০ হাজার একর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডস-১৮৭৯ আইনের আওতায় পরিপূর্নভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন ও মালিকানাধীন করা হয় এবং ভাওয়াল রাজা শ্রী রবীন্দ্র্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ও তাহার ৩ সনত্মানের মৃতু্যর পর রাজ পরিবারের কোন ওয়ারিশ না থাকায় ১৯১১ সালে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের প্রায় ৩০ হাজার একর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন -১৮৭৯ এর আওতায় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন ও মালিকানাধীন করা হয়৷ তারপর সকল সম্পত্তির দাবীদার নির্ধারনী কার্য্য সম্পন্ন করে ঢাকা নওয়াব এস্টেটের প্রায় ২০ হাজার একর এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের প্রায় ৩০ হাজার একর মোট ৫০ হাজার একর সম্পত্তি যথারীতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে আসছে৷ তত্‍কালীন বৃটিশ সরকারের গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের আমলে ১৭৯৩ সালে প্রণীত চিরস্থায়ী বন্দোবসত্ম প্রথার বিরুদ্ধে ১৯৩৮ সালের স্যার ফান্সিস ফ্লাউড কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৯৪৫ সালে স্যার আর্চিবন্ড রাউলেন্ডের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালের ১০ই এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের খসড়া অনুমোদনের পর দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে ১৬ ই ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিসত্মান আইন পরিষদে বিলটি পাশ হয়৷ সর্বশেষ ১৯৫০ সালের ১৬ মে তত্‍কালীন গভর্ণর জেনারেলের সম্মতিক্রমে বিলটি আইনের মর্যাদা লাভ করে৷

এই ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করে তত্‍কালীন পুর্ব পাকিস্থানের সকল রাজা ও জমিদারগনের সকল সম্পত্তির রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা সরকার অধিগ্রহণ করতঃ ১৯৫২ সালে ২৪ মার্চ তারিখের গেজেটে তত্‍কালীন পুর্ব পাকিস্থানের সকল রাজা ও জমিদারগনের মালিকানাধীন সম্পত্তির তালিকা প্রকাশিত করে৷ যেহেতু ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার অনেক পুর্বে ঢাকা নওয়াব এস্টেট এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের সকল সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডস-১৮৭৯ আইনের আওতায় পরিপূর্নভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন ও মালিকানাধীন ছিল, কোন জমিদারী সম্পত্তি হিসাবে জমিদারদের রক্ষনাবেক্ষন ছিল না বিধায় ২৪-০৩-১৯৫২ তারিখের গেজেটে জমিদারী সম্পত্তি হিসাবে গেজেট প্রকাশ করা কোন ভাবে-ই যৌত্তিক ছিল না৷

বিশ্লেষন করে দেখা প্রয়োজন যে, তত্‍কালীন সরকার ঢাকা নওয়াব এস্টেট এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের সম্পত্তি ১৮৭৯ সালের কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইনে নতুনভাবে ৮’এ’ ধারা সংযোজন করে প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে আনার উদ্দেশ্য এবং তার বাসত্মবায়ন সঠিকভাবে হয়েছিল কি-না ? সেইসময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করেই তত্‍কালীন সরকারের সুযোগ সন্ধানী সরকারী কর্মকর্তারা দুরভিসন্ধিমুলক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এই আইনে উক্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি-না ? কারন হিসাবে বলা যায়, তত্‍কালীন বেশীরভাগ প্রজা ছিল সহজ-সরল দরিদ্র কৃষক৷ লেখাপড়া জানত না৷ আইন কানুন বুঝত না৷ হত দরিদ্র ও লেখাপড়া না জানা কৃষক শ্রেণীর জন্য প্রণীত আইনের সুযোগে এক শ্রেণীর চতুর সুবিধাভোগী নিজেদের কৃষক প্রজা বানিয়ে ঐ জমিগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়৷ সুতরাং ইহা প্রমাণিত যে, ১৯০৮ ও ১৯১১ সালে যে সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন-১৮৭ ৯ এর আওতাভুক্ত করা হয়, তাহা ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের আওতাভূক্ত করার পিছনে সুদুর প্রসারী দুরভিসন্ধিমূলক কারণ ছিল৷

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টকারী ভুমি সংস্কার বোর্ডের আইন কর্মকতা ও আইনজীবির উদাসিনীতা এবং কিছু সরকারী অসত্‍ ও দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ভয়ানক চতুর কিছু সংখ্যক ভূমি দসু্য হাউজিং কোম্পানী আদালতে একের পর এক মামলা দায়ের করে আদালতকে ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫২ সালের গেজেট, ১৯৬২ সালের ভ্রমাত্বক এস.এ রেকর্ড ও আর.এস রেকর্ড, ১৯৭২ সালের চ.ঙ-৯০ সহ বিভিন্ন আইনের অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট, জটিল, কুটিল ও অসত্য ব্যাখ্যা দিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে ভূমি সংস্কার বের্াডের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারের উক্ত ৫০ হাজার একর সম্পত্তি আত্বসাত্‍ ও জবরদখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে৷ উল্লেখ্য যে, দেশের স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি সকল সরকারই সি.এস রের্কডের ভিত্তিতে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং এস.এ ও আর.এস রের্কডগুলো তঞ্চকতামূলকভাবে ভ্রমাত্মক হিসাবে রেকর্ড হয়েছে মর্মে ভূমি মন্ত্রনালয় একাধিক প্রজ্ঞাপন জারী করে সংশোধনের জন্য আদেশ দিয়েছে৷ সরকারের সেই সমসত্ম আদেশের বিরুদ্ধে ভয়ানক চতুর ভূমি দসু্যদের আইনী জটিলতা সৃষ্টির কারনে প্রায় ৫০ হাজার একর সরকারী সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে এবং সরকার কতর্ৃক প্রদত্ত লীজপ্রাপ্ত প্রায় বিশ হাজার লীজি বিপুল পরিমান আর্থিক ৰতির সম্মুখীন হচ্ছে৷

আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,১৯০৮ ও ১৯১১ সালে ঢাকা নওয়াব এস্টেট ও ভাওয়াল রাজ এস্টেটের সম্পত্তির ভোগদখলকারীর তালিকা সঠিকভাবে নিরম্নপণ করা হয়েছিল কিনা এবং ঐ তালিকা মোতাবেক খাজনা/ রাজস্ব আদায় করা হত কিনা ? আর যদি খাজনা আদায়ের তালিকা না হয়ে থাকে, তা হলে এখন যারা সম্পত্তি জবরদখলে রেখে বা না রেখে মালিকানা দাবী করছেন তারা কি সঠিক ? এই ব্যাপারে সরকারকেই সঠিক সিদ্ধানত্মে পেঁৗছাতে হবে৷ আর যদি জবরদখলকারী মালিকানা দাবীদার ভূমি দসু্যরা সঠিক মালিক হয়ে থাকে, তাহলে সরকার ঐ সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে কেন ? সরকার কতর্ৃক প্রদত্ত বৈধ প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) বিত্তহীন, গরীব সাধারন মানুষকে লীজ দিয়ে বছরের পর বছর সরকার লীজমানি আদায় করে যাচ্ছে কেন ? সুতরাং সি.এস রেকর্ডের ধারাবাহিকতায় এস.এ ও আর.এস না হয়ে থাকলে তা বাতিল করে সঠিকভাবে মাঠ জরীপ করে রের্কড সংশোধন করা অত্যাবশ্যক৷ অন্যথায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হবে৷ বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়ে বৈধ লীজিগন ও মুক্তিয়োদ্ধারা প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, ভূমি সচিব ও ভূমি সংস্কার বোর্ডকে অবহিত করেও কোন দৃশ্যমান প্রতিকার পায়নি৷

বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি রক্ষা করা অতীব জরুরী জন-গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে৷ ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনে ১৯৫২ ও ১৯৫৬ সালের গেজেটে ভূলক্রমে অনত্মভর্ূক্ত ঢাকা নওয়াব এস্টেট ও ভাওয়াল রাজ এস্টেটের সম্পত্তি অবমুক্ত করে কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন-১৮৭৯ এর মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে ভূমি সংস্কার বোর্ড কর্তর্ৃক রক্ষনা বেক্ষন ও ব্যবস্থাপনার চলমান প্রক্রিয়ার আইনি বাধা দুরীকরনে সরকারী হসত্মক্ষেপ জরুরী ভিত্তিতে অত্যাবশ্যক৷ অন্যথায় সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার জমি ভূমিদসু্যদের হাতে চলে যাবে, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হবে এবং প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) লীজি বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে৷ এই জটিলতা নিরসনে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এ্যাক্ট-১৮৭৯ এর ৮(ক), পি.ও ৯০/১৯৭২, ২৪-০৩-১৯৫২ তারিখের গেজেট সংক্রানত্ম আইন ও আদেশের প্রয়োজনমত সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের মাধ্যমে জনস্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিনিয়র এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ১৫-১২-২০১৪ তারিখে লিগ্যাল অপিনিয়ন ভূমি সংস্কার বোর্ডকে প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে৷