সিগারেটে ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি

করারোপে মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিয়ে সব ধরনের সিগারেট, জর্দা ও গুলের উপর ৭০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধীরা।২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে ১৬টি তামাকাবিরোধী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।

অন্যতম সংগঠন এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এ্যলায়েন্সের (আত্মা) যুগ্ম-আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ সাংবাদিকদের বলেন, সিগারেটের করারোপের জন্য ব্যবহৃত মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিতে হবে- এই মূলস্তর প্রথা কর ফাঁকির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি (বিএটিবি) মধ্যম স্তরের সিগারেট নিম্নস্তর হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। করারোপে স্তরভিত্তিক প্রথা চালু থাকায় এধরনের ঘটনা ঘটছে।সব ধরনের সিগারেটের উপর একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক; বিড়ির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ হারে এবং জর্দা ও গুলের উপর খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করতে হবে।

তিনি বলেন, আয় এবং সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধির জন্য তামাক পণ্যের মূল্য প্রতি বছর সমন্বয় করতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণে তামাকের ওপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, তামাকের চুল্লির উপর বছরে ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ করতে হবে।তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর ফাঁকি রোধকল্পে তামাক পণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে করারোপ করা, তামাক পণ্যের উপর ২% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ব্যয় করার দাবিও জানানো হয়।

একটি গবেষণার উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সব সিগারেটে যদি ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে প্রায় ৭০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী সিগারেট সেবন ছেড়ে দেবেন; ৭০ লাখের বেশি তরুণ ধূমপান শুরুই করবেন না; ধূমপানের কারণে সংগঠিত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে এবং সরকার দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে।

সব বিড়িতে ৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলে প্রায় ৩৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ি ধূমপায়ী বিড়ি সেবন ছেড়ে দেবেন; প্রায় ৩৫ লক্ষ তরুণ বিড়ি সেবন শুরু করা থেকে বিরত হবে; বিড়ি সেবনের কারণে সংগঠিত প্রায় ২৪ লক্ষ অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে; এবং বিড়ি থেকে সরকারের বাড়তি ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. আবদুল মালিক বলেন, সিগারেটে যে ক্ষতি হয়, সেটা এখন আর প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এটা শরীরের সব অঙ্গের ক্ষতি করে।

হৃদরোগ, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের রোগের প্রধান কারণ ধুপমান বা তামাক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার। এটা প্রতিহত না করতে পারলে আমাদের জাতি পঙ্গু হয়ে যাবে।

এই চিকিৎসক বলেন, তামাক থেকে আমরা যে কর পাই, তার থেকে বেশি টাকা খরচ হয়ে যায় চিকিৎসা খাতে। উন্নয়ন টেকসই করতে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।একজন গরীব লোক, খেয়ে পরে বেঁচে আছেন; সন্তানরা লেখাপড়া করেন। তার যদি হার্টের রোগ হয়, তাহলে দেখা গেছে, চিকিৎসার জন্য দুধ দেওয়া গাভীটি বিক্রি করে দিতে হয়। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে ক্ষতি অনেক। একবার উচ্চ রক্তচাপ হলে তার চিকিৎসা সারা জীবন করতে হয়। এগুলো ক্রনিক রোগ।

এই সমস্যা সমাধানে করতে হলে বিভিন্ন বাধার মোকাবেলা করতে হয়। কারণ যারা ব্যবসার সাথে জড়িত তারা কৌশল অবলম্বন করে। এখানে তাই কর বাড়িয়ে বিক্রি কমাতে পারলে এক সময় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে।এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এ্যলায়েন্সের আহ্ববায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- প্রজ্ঞা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, অধীর ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, বিসিসিপি, এসিডি, ইপসা, প্রত্যাশা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এন্টি টোব্যাকো এ্যালায়েন্স (বাটা) ও নাটাব।তামাক পণ্যে কর বৃদ্ধির পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনটি যুক্তি দেখানো হয়।পৃথিবীতে যেসব দেশে সিগারেটের মূল্য অত্যন্ত কম বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম, নেপাল ও মায়ানমারের পরই এর অবস্থান।
দ্বিতীয়ত, তামাক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় সস্তা হয়ে পড়ছে।তৃতীয়ত, তামাক টেকসই আয় অর্জনের একটি অন্যতম প্রধান উৎস।