Old_High_Court_Building_Dhaka_Bangladesh

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মার্চ: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ১৩ এপ্রিল দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেয়।গত ২৪ মার্চ জামালপুরের এই ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আট আসামির মধ্যে ২ জন কারাগারে থাকলেও ৬ জন পলাতক রয়েছে।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আলবদর বাহিনীর জামালপুরের উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।মামলার আইও মতিউর রহমান বলেন, গত ২৫ মার্চ আট আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হন্তান্তর করা হয়।এ আসামিদের বিরুদ্ধে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের সুনির্দিষ্ট দশটি অভিযোগ। একই মামলায় আট আসামি হলেন- আশরাফ হোসেন (৬৪), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (৭১), মো.আবদুল মান্নান (৬৬), মো. আবদুল বারী (৬২), মো. হারুন (৫৮), মো. আবুল হাশেম (৬৫), এডভোকেট শামসুল হক (৭৫) ও এস এম ইউসুফ আলী (৮৩)।এর আগে গত ২৪ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক এবং এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মতিউর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত বিষয়ে কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৯২ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনসহ ৫৯৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ, দলিল ও ডকুমেন্টস রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত কাজ শুরু করে ২৪ মার্চ তা সম্পন্ন করেন। মামলায় ঘটনার ৩৪ জন ও জব্দ তালিকার ৬ জনসহ মোট ৪০ জন সাক্ষী রয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধকালে ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় আসামিরা অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করে প্রশিক্ষণ প্রদান। স্থানীয় পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তুলে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ, ৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।

মামলার আইও মতিউর রহমান জানান, আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত এডভোকেট শামসুল আলম এবং এস এম ইউসুফ আলী স্থানীয় জামায়াত নেতা। অন্যদিকে প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করাকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মামলাটি দায়েরের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। পলাতক অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই অভিযান চালিয়ে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়ীয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে কারাগারে থাকা এ দুই আসামিকে তদন্তের স্বার্থে গত ৬ মার্চ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা।