মাঘ মাস না পেরুতেই প্রকৃতিতে বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। সঙ্গে যোগ হয়েছে অধিকাংশ আম গাছে আগাম মুকুল। গাছের শাখে শাখে আগুনরঙা ফুল। চারিদিকে স্বর্ণালী শোভা। যেমন তার সৌন্দর্য, তেমনি তার ঘ্রাণ। মুকুল ভরা ডালে পাতাদের হাতছানি। মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা মৌমাছির দল। গুন গুন সুরে মুকুলের ওপর বসে চলছে ছন্দের নাচন।
ভাষায় ফোটানো না গেলেও আমের গাছে এমন মুকুল ফোটা দৃশ্য এখন আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলা সহ পুরো জেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে। সারি সারি আমগাছে যেনো হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা। গাছে গাছে দেখা দিয়েছে মুকুলের সমারোহ। এবার এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা কম থাকায় আগাম মুকুল এসেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। মাঘে এই আগাম মুকুল আমচাষীদের মনে আশার আলো জ্বাললেও গবেষকদের মতে, ঘন কুয়াশা হলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এসব আগাম মুকুল। তবে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জেলা ফল গবেষণাগার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত বছর রাজশাহী জেলায় আমের বাগান ছিল ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে জমিতে। এর মধ্যে তানোর উপজেলায় আমের বাগান ছিল প্রায় ১ শত ৫১ হেক্টর জমিতে। এবছর বাগানের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমচাষীরা জানান, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে তীব্র শীত নামেনি। অন্য মৌসুমের চেয়ে এবার তাপমাত্রা কিছুটা বেশি। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমের মুকুল আসার কথা থাকলেও এবার এক মাস আগে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই অধিকাংশ গাছে আগাম মুকুল চলে এসেছে। তারা আরো জানান, গাছে গাছে বাহারী জাতের আম এখন স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। সব ভেবে তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে মুনাফার আগাম বার্তা।
উপজেলার চাপড়া গ্রামের আমচাষি সাইদুর রহমান জানান, আম গাছে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা ছাড়া আমচাষিদের এখন অন্য কিছু করার ফুরসত নেই। মুকুল পুরো ফোটার আগে গাছে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে, যেন মুকুলে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। আবার গুটি ধরার পর আরেক দফা স্প্রে করা হবে।

তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাউডারি মিলডিউ নামে এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতিলিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম প্রতিবেদকে জানান, ‘এবার শীত কম। তাপমাত্রা বেশি। একারণেই তানোর উপজেলাসহ পুরো জেলা জুড়ে আম গাছগুলোতে আগাম মুকুল এসেছে। তিনি জানান, ধান-চাল বা অন্য কয়েকটি ফসলের মত আম উৎপাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা কৃষি অধিদফতরের কাছে থাকেনা। তবে এ বছর জেলায় ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। আগামী দিনগুলোয় কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গ; রাজশাহী জেলায় প্রাায় আড়ইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে এরমধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আর্মপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়ে থাকে।#

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি