ধর্ষণ

দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির প্রজনন অঙ্গে দেখা দেওয়া সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার (সেপটিসিমিয়া) আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। তাকে পুষ্টিকর খাবার দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির জন্য গঠিত নয় সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল দলের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্রের সুপারিশ করেছেন। সেটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে উচ্চ ক্ষমতার ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।নয় সদস্েযর মেডিকেল বোর্ড করে শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক কাজল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটিকে বোর্ড দেখেছে।শিশুটির প্রজনন অঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। যদি সংক্রমণ রক্তে ছড়ায়, তাহলে বিষয়টি ভয়বহ হবে।

শিশুটির পুষ্টির অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,শিশুটিকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তার প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপ্রচার করতে দেড় থেকে দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে।সকালে শিশুটির বাবা টেলিফোনে বলেন, মেয়ের চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ সরকার বহন করছে। আজ মেয়ে কেমন আছে, জানতে চাইলে বাবা বলেন, ওসিসিতে মেয়ের কাছে যে যাব, আমার তো খুব খারাপ লাগে। আমার বুকের ভিতর তো ফাটি যাতিছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফ-উল হক বলেন, শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। বীভৎস কায়দায় ধর্ষণের পর একটি খেতের মধ্যে নোংরা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছিল। তার রক্ত সংক্রমণ বা সেপটিসিমিয়া হওয়ার ভয় আছে। তবে শিশুটি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে।

পাঁচ বছরের এই শিশুকে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওর মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত।১৮ অক্টোবর শিশুটি নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেদিন তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন ভোরে শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে হলুদখেতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল, পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেলে।শিশুটির বাবা যাঁর পিকআপ ভ্যান চালাতেন, ঘটনার পর থেকে তিনি সঙ্গে আছেন। তাঁরও একই এলাকায় বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ার পরও কারও মনে হয়নি যে ওকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এত ছোট শিশুকে ধর্ষণ করা যায়, তা তাঁরা ভাবতেই পারেননি। এলাকায় এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলেও তাঁদের জানা নেই।

ঘটনার পর শিশুটির বাবা ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজ (৪৮)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার চৌধুরী বলেন, ২৪ অক্টোবর রাতে দিনাজপুর শহর থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আফজাল পলাতক।গত ১৮ অক্টোবর পার্বতীপুর উপজেলার সিঙ্গীমারী জমিরহাট গ্রামের ওই শিশু বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। সন্ধান না পেয়ে ওইদিন রাতে তার বাবা পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।পরদিন ভোরে বাড়ির পাশে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে মেয়েটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গত ২০ অক্টোবর রাতে শিশুটির বাবা একই গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৮) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন।মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামি পলাতক।বুধবার গাইনি বিভাগের প্রধান ফেরদৌসি ইসলামের নেতৃত্বে এই বোর্ড করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের সদস্যরা হলেন- আশরাফ উল হক কাজল, আমানুর রসুল, জিল্লুর রহমান, সাদিয়া আনোয়ার, মো. আবুল কালাম,আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. মোজাম্মেল হোসেন। সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন বিলকিস বেগম।এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের দুই সচিব শিশুটিকে দেখতে যান।শাকিল শিশুটির চিকিৎসার ভার সরকার নিয়েছে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাবুবুল হক শাকিল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।শাকিল বলেন,প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব নিয়েছে।ধর্ষিত শিশুটির চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খবর রাখা শাকিল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে যান।তিনি সেখানে শিশুটির মা ও নানীর সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসার সর্বশেষ খবর নেন। তিনি শিশুটির জন্য কিছু ফলও নিয়ে যান।গত ১৮ অক্টোবর পার্বতীপুর উপজেলার সিঙ্গীমারী জমিরহাট গ্রামের ওই শিশু বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। সন্ধান না পেয়ে ওইদিন রাতে তার বাবা পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরদিন ভোরে বাড়ির পাশে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে মেয়েটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির জীবনহানির শঙ্কা না থাকলেও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত রয়েছে।তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই মাসের মত সময় লাগতে পারে।বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের পক্ষে তার একান্ত সচিব শেখ আলতাফ হোসেন এবং সহকারী একান্ত সচিব মির্জা আশফাক হোসেন বৃহস্পতিবার শিশুটিকে দেখতে যান।গণশিক্ষামন্ত্রী বর্তমানে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ফিজারের এলাকায় ওই শিশুটির বাড়ি। শেখ আলতাফ পরে বলেন, ইতোমধ্যেই শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। এরপরও তার চিকিৎসায় যেকোনো সহযোগিতার দায়িত্ব মন্ত্রী নিয়েছেন।তিনি মন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে কিছু অর্থ তুলে দেন।ধর্ষণের ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর রাতে শিশুটির বাবা একই গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৮) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন।মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারলেও অন্য আসামি এখনও পলাতক ।