কলম্বোর পি. সারা ওভালে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে শততম টেস্টে দ্বিতীয় দিনের শেষ ভাগ হতাশা নিয়েই শেষ করলো সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকাকে ৩৩৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে নিজেদের ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং শুরু করে টাইগাররা। এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৯২ রানে পৌঁছেও যায় তারা। কিন্তু এরপর ৬ বল ও ৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এতে ৫ উইকেটে ২১৪ রান তুলে দিন শেষ করে টাইগাররা। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে এখনো ১২৪ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

দীনেশ চান্ডিমালের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৭ উইকেটে ২৩৮ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছিলো শ্রীলংকা। দ্বিতীয় দিনেও নিজের সেরাটা দিয়েছেন চান্ডিমাল। ফলে টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি। এরমধ্যে ৪টিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। যা টেস্ট খেলুড়ে কোন দেশের বিপক্ষে চান্ডিমালের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি।৮৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে শেষ পর্যন্ত ১৩৮ রানে থামেন চান্ডিমাল। তার ৩০০ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের তৃতীয় শিকার হবার পর শ্রীলংকার নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন চান্ডিমাল।

নীচের দিকে শ্রীলংকার হয়ে বলার মত রান করেছেন অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ ও সুরাঙ্গা লাকমল। ১৮ রান নিয়ে শুরু করে হেরাথ ২৫ রান করে আউট হন। এছাড়া লাকমল ৪৫ বলে ৩৫ রান করেন। ফলে ৩৩৮ রান পর্যন্ত যেতে পারে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মিরাজ ৩টি, মুস্তাফিজুর-শুভাশিষ-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। আর তাইজুলের শিকার ১ উইকেট।এরপর বাংলাদেশ ইনিংসে খেলতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়ে বসেন তারা। ফলে রান তোলার গতিটা বেশ ভালোই ছিলো টাইগারদের। দলের স্কোর তিন অংকে ও নিজেদের হাফ-সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন তামিম ও সৌম্য।কিন্তু তামিমের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন শ্রীলংকার বাঁ-হাতি স্পিনার হেরাথ। তামিমকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে দলীয় স্কোর ৯৫ ও নিজের নামের পাশে ৪৯ রান রেখে থামেন তামিম।তামিম না পারলেও, টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সৌম্য। এই নিয়ে টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করলেন সৌম্য। তবে ৬১ রানে আউট হলে নিজের ইনিংসটা খুব বেশি বড় করতে পারেননি তিনি। তামিমের মত ৬টি চার মারেন সৌম্যও।দলীয় ১৩০ রানে সৌম্যর বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। ব্যাটিং-এ প্রমোশন পেয়ে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করেন সাব্বির। অন্যপ্রান্তে টেস্ট মেজাজে ছিলেন ইমরুল। তাই দু’জনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে দুর্দান্তভাবে দিন শেষ করার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ।

ইমরুল ও সাব্বিরের কল্যাণে ৫৬ দশমিক ৩ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১৯২ রানে পৌঁছেও যায় বাংলাদেশ। এরপরই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। পরের ৬ বলে ৬ রান যোগ হতেই ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের।ইমরুলকে ফিরিয়ে সাব্বিরের সাথে গড়ে উঠা ৬২ রানের জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার বাঁ-হাতি স্পিনার লক্ষণ সান্দাকান। ৩৪ রান করেন ইমরুল। এরপর ক্রিজে আসেন নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে কোন রান করার আগেই সান্দাকানের শিকার হন তাইজুল।এরপর দলীয় ১৯৮ রানে পেসার লাকমলের বলে ফিরেন সাব্বির। ৫টি চারে ৫৪ বলে ৪২ রান করেন সাব্বির। মিনি ধসের পর উইকেটে আসেন দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব ও অধিনায়ক মুশফিকুর।দিনের শেষটায় আর কোন বিপদ ঘটতে দেননি সাকিব-মুশি। অবশ্য দিনের খেলা শেষ হবার ৬ বল আগে ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত টি-২০ স্টাইলে ব্যাট করে ৩টি চারে ৮ বলে ১৮ রানে সাকিব ও মুশি ২ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। শ্রীলংকার সান্দাকান নেন ৩ উইকেট।