30-09-16-airport-9

টানা ১৭ দিনের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে তাঁকে বহন করা এমিরেটস এয়ারলাইনসের বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা জানিয়েছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিমানটি অবতরণ করল। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭১ তম অধিবেশনে অংশ নেন। সেখানে থেকে দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর বোর্ডিং ব্রিজেই তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।কুশল বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর জ্েযষ্ঠ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

বিমানবন্দরে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররাফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ওবায়দুল কাদের, দীপু মনি, ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আসাদুজ্জামান নূর, এ বি তাজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, সাহারা খাতুন, এ কে এম রহমতউল্লাহ, কামরুল ইসলাম, আবদুস শহীদ, আবদুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মুজিবুল হক, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তারানা হালিম, মেহের আফরোজ চুমকি, ইসমত আরা সাদেক, হাবিবুর রহমান খান সিরাজ, নাহিম রাজ্জাক প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাইদ খোকনও উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সরাসরি গণভবনের উদ্দেশে রওনা হয়। আধা ঘণ্টার মধ্েয গণভবনে পৌঁছে যান তিনি। শেখ হাসিনাকে ‘গণঅভ্যর্থনা’ দিতে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিকালের আগেই অবস্থান নিয়ে ছিল।তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ নানা রঙের বেলুন। শেখ হাসিনার গাড়িবহর যাওয়ার সময় তারা স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান।এদিকে, দেশে ফেরা ও জাতিসংঘের দুটি পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের এক পাশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কের অনেকাংশ দখল করে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অবস্থান নেওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যানজট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে যোগদান ও কানাডা সফর শেষে আজ শুক্রবার দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে নারীর ক্ষমতায়ন ও এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এ কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।

বিমানবন্দর সড়কে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি, সড়কের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়া, সড়কে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করার কারণে বিমানবন্দর থেকে গণভবন আসার সড়কে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। গাড়িগুলোকে ধীরগতিতে একটি, কখনো বা দুটি লেনে চলতে হয়। ফলে টঙ্গী পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে বিপরীত পাশের সড়কের বিজয় সরণি থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। বিমানবন্দর মোড় ধীরগতিতে পার হওয়ার কারণে যানজট নিকুঞ্জ পর্যন্ত দেখা যায়। তা ছাড়া মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।যানজটের কারণে বিমানবন্দর মোড় থেকে গাড়ি উত্তরার দিকে যেতে বাধা পাওয়ায় মোড় থেকে টঙ্গীগামী মানুষ কোনো পরিবহন পাচ্ছিল না। অন্যদিকে বিজয় সরণি থেকে শাহবাগগামী মানুষকেও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অনেককেই পরিবহন না পেয়ে হেঁটে, আবার যানজটে বসে না থেকে গাড়ি থেকে নেমেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।শুক্রবার বেলা দুইটার পর থেকে তাঁরা বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক ঢোল, তবলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে স্লোগান দেন।
অনেকের হাতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। অনেকে ফুল নিয়েও এসেছেন।ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর থেকে গণভবনের দিকে যাওয়ার সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে গেছেন।আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যাপক অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিমানবন্দর থেকে গণভবনে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলটির নেতা-কর্মীরা।আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আওয়ামী লীগসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দল, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল ফ্লাইওভার, হোটেল র‌্যাডিসন, কাকলীর মোড়, বনানী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় সরণি, সামরিক জাদুঘর, জাতীয় সংসদ ভবন মোড় ও গণভবন পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।এদিকে,প্রধানমন্ত্রীকে গণঅভ্যর্থনা দিতে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিকালের আগেই অবস্থান নেয়।বিভিন্ন স্থানে তারা সড়কের মধ্যে উঠে আসায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে; যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একদিন আগে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সুশৃঙ্খলভাবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, আমরা তাকে কিছু দিতে পারব না। শুধু একটু ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাব।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।দুবাই থেকে দেরিতে রওনা হওয়ায় দুই ঘণ্টা পর বিমানটি দেড় ঘণ্টা পরে পৌঁছায়।যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার এমিরেটসের ফ্লাইটে ঢাকার পথে রওনা হন শেখ হাসিনা। দুবাইয়ে তার যাত্রাবিরতি ছিল।১৭ দিনের বিদেশ সফর শেষে ফিরলেন শেখ হাসিনা। ঈদুল আজহার একদিন পর রওনা হয়ে প্রথমে কানাডা যান তিনি।মন্ট্রিয়ালে ‘ফিফথ রিপ্লেসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’-এ অংশগ্রহণ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি নিউ ইয়র্ক যান।জাতি সংঘে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।২৬ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর জন্য তা পরিবর্তন হয়। নিউ ইয়র্ক থেকে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাড়ি ভার্জিনিয়ায় যান তিনি।গত বুধবার সেখানেই ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনীর সঙ্গে নিজের জন্মদিন কাটে শেখ হাসিনার।পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যেও গত ছয় দিনে রাষ্ট্রীয় ৫১টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে প্রধানমন্ত্রী সই করেন বলে মুখ্যসচিব আবুল কালাম জানান।