Tanore Komla-Malta Photo-01 18.08.2016দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কিছুদিন আগেও মালটা ও মিষ্টি কমলা চাষ ছিলো স্বপ্নের মতো আর এ অসম্ভবকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই সম্প্রসারিত করেছে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী। তার দেখাদেখি মিষ্টি কমলা উৎপাদন খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই বাড়ির আঙিনায় রোপন করছেন কমলার চারা।জানা যায়, আমদানি করা ভারতীয় মালটার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত মাল্টা উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু এবং অন্য সব মৌসুমি ফলের চেয়ে এটি লাভের ব্যাপকতা বেশি।

উপজেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, সাংসদ ফারুক চৌধুরী কমলা ও মাল্টা চাষের নমুনা সরুপ ২০১৩ সালে ২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফল বাগানের মধ্যে চাষ শুরু করেন। যার ফল ভোগ করতে শুরু করেছেন তিনি। এরফলে শতশত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি এসব কমলা ও মালটা ফলের বাগান পরিদর্শন করেন গত মঙ্গলবার। এছাড়াও সাংসদের এ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে গত বছর উপজেলার লালপুর গ্রামের মোসলেম আলী দেড় বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন।

Tanore Komla-Malta Photo02 18.08.2016কলমা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, সাংসদ ফারুক চৌধুরীর শুধু কলমা চাষ নয়। তার শতশত বিঘা জমিতে মিশ্র ফল বাগান রয়েছে। চলতি সালে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ব্যাপক আকারে কমলা ও মালটা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাংসদ। এজন্য তিনি স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সহ বিভিন্ন স্থানের কাছে সব ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন এবং চারা রোপনের চিন্তাভাবনা করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, সাংসদের বাগানের কমলা ও মালটার স্বাদ নিয়ে প্রথমে ভয় ছিলো। কিন্তু পাকার পর দেখা গেছে এখানকার মালটা সুস্বাদু। তাছাড়া পাকার পরও অনেক দিন রেখে খাওয়া যায়। নষ্ট হয় না এবং স্বাদও ঠিক থাকে। স্থানীয় এমপির কমলা চাষে সফলতা দেখে উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের সুইডেন প্রবাসী হাসানুজ্জামান মুন। তিনি এক যুগ আগে সখের বসে যশোহর থেকে একটি কমলা গাছ কিনে বাড়ি উঠানে লাগিয়ে ছিলেন। গত দুই বছর ধরে প্রচুর পরিমানে কমলা ধরছে গাছটিতে। শুধু রঙএ নয়, খেতেও সুস্বাদ মিষ্টি। গাছেটিতে কমলা দেখে স্থানীয় কৃষিবিদদের ধারনা বরেন্দ্র অঞ্চলের পোড়া মাটিতে কমলা চাষের উজ্জল সম্ভবনা আছে।

এনিয়ে কমলা চাষী হাসানুজ্জামান মুন জানান, গাছে কমলা ধরা দেখে বেশ উচ্ছ্বাসিত তারা। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছে আছে তাদের। এ উপজেলায় কয়েক বছরের মধ্যে এই রকম ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার ২ থেকে ৩টি করে কমলার গাছ রোপন করেছেন। এদের অনেকের গাছে ফলও ধরতে শুরু করেছে। অনেকের গাছে রঙ্গিন কমলা সোভা পাচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদকে জানান, সাংসদের কমলার গাছগুলোর উচ্চতা এবং কমলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এগুলো থাই কমলা। তবে এই মাটিতে এত বেশি কমলা ধরছে যা আগামীতে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে কমলা চাষের আগাম বার্তা দিচ্ছে। সর্বপরি অধিক হারে মালটা চাষের সম্প্রসরণ করা গেলে বিদেশ থেকে আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে।
সাংসদ সহ স্থানীয় কৃষকদের মাল্টা চাষে আগ্রহী ও সফলতা দেখে চলতি বছর কৃষি সম্প্রাসরণর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.হামিদুর রহমার সরেজমির এসে মাল্টা বাগান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, ডাক্তারি মতে মালটা হচ্ছে ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফল। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ’সি’ খাওয়া প্রয়োজন। জমি ভাল করে চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে। তার পর দুই থেকে আড়াই ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও গভীর করে গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি এক তৃতীয়াংশ এক দিকে এবং বাকি নিচের মাটি অন্য দিকে রাখতে হবে উপরের মাটির সাথে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সার বা কম্পোষ্ট সার ১৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ৫ গ্রাম, বোরিক এসিড ১ কেজি ও পরিমান মত চুন মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে গর্তের নিচে দিয়ে উপরের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে ১০ দিন পরে চারা রোপন করতে হবে।

উল্লেখ্য; রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায, জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষাবাদ শুরু না হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বাসা-বাড়ির আশপাশে পড়ে থাকা জমিতে মিষ্টি কমলার গাছ রয়েছে।

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি