ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের অধিবেশন চলাকালে পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এই হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তা ও হামলাকারীসহ চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। হামলার আগে পার্লামেন্ট সংলগ্ন ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারীদের ওপর হামলাকারী গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হতাহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। পার্লামেন্ট ভবনের রেলিং-এ গিয়ে গাড়িটি ধাক্কা দেয়। চালক গাড়ি থেকে বের হয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীরা হামলাকারীকে গুলি ছুড়লে তার মৃত্যু হয়। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা বলে আখ্যায়িত করেছে। ছুরিকাঘাতে হামলা ও পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় হামলাকারীর সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ছুরিকাঘাতে হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এছাড়া ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। আর ব্রিজে পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দু’জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। পার্লামেন্টে থাকা একজন রাজনীতিক জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি পুলিশকে ছুরি মেরে আহত করেছে। এরপর সশস্ত্র পুলিশ তাকে গুলি করে। পার্লামেন্টের বাইরে গোলাগুলির ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে অক্ষত রয়েছেন। গুলির আওয়াজের পরপরই তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, পুরো এলাকায় সশস্ত্র পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে আততায়ীর ছুরির আঘাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে কতজন আহত হয়েছেন, তা জানা যায়নি। আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমান্ডার বেন-জুলিয়ান হ্যারিংটর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পার্লামেন্ট স্কয়ারের ঘটনায় পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে এবং ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে। হামলার মোটিভের বিষয়ে আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। সন্ত্রাসী হামলার পূর্ণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আমরা জানি আহতের সংখ্যা অনেক। তবে এই মুহূর্তে আহতদের কিংবা তাদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুরো শহরজুড়ে পুলিশি তদন্ত চলছে।’ এ কারণে তিনি শহরের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

দুই ঘটনায় পুরো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পার্লামেন্টের অধিবেশনও মুলতবি করে দেওয়া হয়েছে। এমপিদের নিজ নিজ কার্যালয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর থেকে রাজনীতিক ও সাংবাদিকরা টুইট করে জানিয়েছেন, তারা ভবনের বাইরে জোরালো আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভেতরে আটকে পড়া এমপিদের বের করে আনা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘক্ষণ পার্লামেন্টের সেফরুমে থাকার পর তাদের নিজ সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ব্রিটিশ এমপি অ্যান্ডি স্প্যারোর বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা বাসায় ফিরছেন। হামলার পর শুরু হওয়া গোলাগুলির মধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি সুস্থ ও নিরাপদ আছেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্ট থেকে নাম্বার টেন-এ নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি এখন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।

হামলার কিছুক্ষণ আগেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করেন। পার্লামেন্টের বাইরে গোলাগুলি শুরু হলে তাকে দ্রুত একটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এরপর পার্লামেন্ট স্কয়ারে জরুরি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। তা ঘিরে রাখে পুলিশ এবং পার্লামেন্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও পার্লামেন্টের ভেতরে আটকা পড়েছিলেন এমপিরা। এছাড়া পথচারী, স্কুলের শিক্ষার্থী ও পার্লামেন্ট ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিখ্যাত লন্ডন আই দেখতে আসা পর্যটকরাও আটকা পড়েছিলেন।

হামলার সময় পার্লামেন্টের ভেতরেই ছিলেন ব্রিটিশ এমপি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। তবে হামলায় তার কোনও ক্ষতি হয়নি, তিনি নিরাপদ আছেন বলে টুইটারে এক পোস্টে জানিয়েছেন।

বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন ৪ জন। এদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। পুলিশের গুলিতে ছুরি হাতে হামলাকারী নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ২০ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে। লন্ডন মেট্রোপলিট্রন পুলিশ ঘটনাকে ‘জঙ্গি হামলা’ আখ্যা দিয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পার্লামেন্ট ভবনে পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতের পর গোলাগুলি শুরু হয়। সেখানে গাড়ি দিয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গি ভবনের রেলিংয়ে ধাক্কা দেয়। গাড়ি থেকে বের হয়ে সে একজন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে। সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের প্রধান মার্ক রওলি জানিয়েছেন, পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালাতে ওঁৎপেতে থাকা এক হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। এছাড়া আরও দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন ওয়েস্ট মিনিস্টার গেটের হামলায়। সেখানে পথচারীদের ওপর দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে হামলা করা হয়েছে। এতে দুজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। সূত্র: গার্ডিয়ান।