scorpene_23177_1472072358

ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘স্করপেন’ মডেলের অত্যাধুনিক সাবমেরিনের অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। ফরাসি মডেলের ‘স্করপেন’ সাবমেরিন প্রজেক্টের কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পৃষ্ঠার নথি ফাঁস হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি পত্রিকায়। ওইসব নথি ফাঁসের সত্যতাও নিশ্চিত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর। এমনকি হ্যাকারদের কবলে পড়েই এ ঘটনাটি ঘটেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। খবর এনডিটিভি ও রয়টার্সের।

ফরাসি অস্ত্র নির্মাণ সংস্থা ডিসিএনএসের সঙ্গে গত বছর ভারতের প্রায় ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি অনুযায়ী ৬টি সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে মুম্বাইয়ের মাজাগাঁও বন্দরে। ফরাসি প্রকৌশলের বানানো ‘স্করপেন’ মডেলের ওই সাবমেরিনগুলোর ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়েছে ভারতে। বাকি যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে ডিসিএনএস।

‘রেস্ট্রিকটেড স্করপিন ইন্ডিয়া’ নামে ফাঁস হওয়া ওই নথিতে যুদ্ধ জাহাজ সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বানানো যুদ্ধজাহাজের টর্পেডো লঞ্চ সিস্টেম, কমব্যাট লঞ্চ সিস্টেম, পানির তলায় ও জলে সেন্সর সংক্রান্ত তথ্য ছিল ওই নথিতে। দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় সাবমেরিনের কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই নথি ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে বুধবার পরিকর বলেন, রাত ১২টা নাগাদ আমার কাছে খবর আসে ওই নথি ফাঁস হয়েছে। এটা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে। তবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান পরিকর।

নৌবাহিনীর এক কর্তা জানান, ওই হ্যাকিং অবশ্যই ভারতের বাইরে থেকেই হয়েছে। তবে এর ফলে খুব একটা ক্ষতি হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। এমনকী, অস্ট্রেলিয়ার ওই সংবাদপত্র কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত যে ব্যাখ্যা করেছে সেটাও ঠিক নয় বলে তার দাবি। ওই সংবাদপত্রের দাবি, পাঁচ বছর আগে ২০১১ সালে ফ্রান্সে ওই নথি ফাঁস হয়। তবে যৌথ উদ্যোগের এই তথ্য কোথা থেকে ফাঁস হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি তারা। গত বছরের অক্টোবরেই ‘স্করপেন’ মডেলের প্রথম সাবমেরিন ‘আইএনএস কালভারি’কে জলে ভাসানো হয়। এক বছর ধরে তার কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আগামী সেপ্টেম্বরেই ‘আইএনএস কালভারি’র ভারতীয় নৌবাহিনীতে নিয়ে আসার কথা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাকি ৫টি সাবমেরিনই বানানো সম্পন্ন হবে বলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল। তার আগেই ওই সাবমেরিনের কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

‘স্করপেন’ মডেলের সাবমেরিনগুলো অন্য সাবমেরিনের থেকে অনেকটাই আলাদা। যেমন ‘আইএনএস কালভারি’ ৬৭ মিটার লম্বা। তার ওজন দেড় হাজার টনেরও বেশি। চওড়া প্রায় সাড়ে ৬ মিটার। এটি এমন ভাবে বানানো হচ্ছে যাতে তা অনেকক্ষণ জলের তলায় ডুবে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, ‘স্করপেন’ থেকে অনায়াসে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার টর্পেডো এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে।

স্করপিনের ওইসব তথ্য লেখা হয়েছিল ফ্রান্সে। আগামী কয়েক দশকের জন্য এই স্করপিন সাবমেরিন ভারতীয় নৌবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল। ফাঁস হওয়া নথির ৪ হাজার ৪৫৭ পাতায় যুদ্ধজাহাজের পানির তলার সেন্সর সম্পর্কে তথ্য, ৪ হাজার ২০৯ পাতায় পানির উপরের সেন্সর সম্পর্কিত তথ্য, ৪ হাজার ৩০১ পাতায় কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কিত তথ্য এবং ৪৯৩ পাতায় টর্পেডো লঞ্চ সংক্রান্ত তথ্য ছিল। এছাড়া ৬ হাজার ৮৪১ পাতা জুড়ে যুদ্ধজাহাজের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ২ হাজার ১৩৮ পাতায় নেভিগেশন সিস্টেমের বর্ণনা ছিল।