ভারতের ছুঁড়ে দেয়া পাহাড় সমান রান সামনে রেখে নিজেদের ইনিংসের শুরুতে কিছুটা চাপে পড়লেও, সাকিব আল হাসানের ব্যাটে চড়ে চাপ সামলে উঠে বাংলাদেশ। তবে ব্যক্তিগত ৮২ রানে সাকিব বিদায় নিলে আবারো চাপের সম্মুখীন হয় টাইগাররা। কিন্তু তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে মুশফিকুর রহিম ও আট নম্বর ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজের অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিতে দুর্দান্ত লড়াই করে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ভারতের ৬৮৭ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৩২২ রান করেছে টাইগাররা। এখনো ৩৬৫ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা।ফলো-অন এড়াতে এখনো আরও ১৬৫ রান করতে হবে বাংলাদেশকে।অধিনায়ক বিরাট কোহলির ডাবল-সেঞ্চুরি, ওপেনার মুরালি বিজয় ও উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হায়দারাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৬৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষনা করেছে ভারত। দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ৪১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ফলে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৪৬ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করে টাইগাররা।

রানের পাহাড়ে চড়ে দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ফলে শেষ বিকেলে ১৪ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ওপেনার সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে ১ উইকেটে ৪১ রান তুলে দিন শেষ করেছিলো টাইগাররা। ওপেনার তামিম ইকবাল ২৪ ও মোমিনুল ১ রানে অপরাজিত ছিলেন।কিন্তু তৃতীয় দিন নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালোভাবে করতে পারেননি তামিম ও মোমিনুল। ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন তামিম। তাই ২৪ রানেই থেমে যেতে হয় তামিমকে।ব্যর্থ হয়েছেন মোমিনুলও। বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। ভারতীয় বোলার উমেশ যাদবের পেসের তোপে পড়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে বিদায় নিতে হয় মোমিনুলকে। এতে ৩ উইকেটে ৬৪ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ।এ অবস্থায় পাল্টা আক্রমণে যান বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। উইকেটে গিয়েই মারমুখী মেজাজ দেখান তিনি। এতে লড়াই করার সাহস পেয়ে যান অন্যপ্রান্তে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাই জমে উঠার আভাস দেয় মাহমুদুল্লাহ-সাকিব জুটি। কিন্তু সেই জুটিতে বাঁধসাধেন ভারতের পেসার ইশান্ত শর্মা। এতে কপাল পুড়ে মাহমুদুল্লাহ’র। থামেন ২৮ রানে।

দলীয় ১০৯ রানে মাহমুদুল্লাহ’র বিদায়ের পর ক্রিজে সাকিবের সঙ্গী হন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ভারতীয় বোলারদের লাইন-লেন্থের দিকে নজর দিয়ে রান তোলার কাজে মনোযোগী হন তারা। এতে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডটা শক্তপোক্ত হতে থাকে।ওভার প্রতি প্রায় ৪ রানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন সাকিব ও মুশফিকুর। এর মাঝে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২১তম ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। রান তোলার গতি ধরে রেখেছিলেন মুশিও। ফলে জুটির স্কোর তিন অংকে পা দেয়। কিন্তু এরপরই নিজের ক্ষতিটা নিজেই ডেকে আনেন সাকিব। বিশ্বের এক নম্বর স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন সাকিব। ১৪টি চারে ১০৩ বলে ৮২ রান করেন ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রান করা সাকিব।

মুশফিকুরের সাথে ১০৭ রানের জুটিতে সাকিবের অবদান ছিলো ৫৯ রান। এরপর দলের হাল ধরার দায়িত্ব বর্তায় মুশফিকুর ও সাব্বির রহমানের উপর। কিন্তু সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি সাব্বির। রবীন্দ্র জাদেজার প্রথম শিকার হবার আগে মাত্র ১৬ রান করেন সাব্বির।সাব্বিরের বিদায়ে বাংলাদেশের ইনিংস কোথায় গিয়ে থামে, সেই প্রশ্ন চাউর হয় স্টেডিয়াম জুড়ে। কারন সাব্বিরের পর স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে আর কেউই ছিলেন না। লোয়ার-অর্ডারে আশার প্রতীক হিসেবে থাকলেও, গেল ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে শতভাগ ব্যর্থ মেহেদি হাসান। সর্বোচ্চ ১০ রানে তার মোট স্কোর২০। তাই মুশফিকুরের সাথে পরবর্তীতে কেউ লড়াই করবে, তা ভাবেনি বাংলাদেশ।কিন্তু সকল চিন্তা-ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে ব্যাট হাতে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যানে পরিণত হন মিরাজ। মুশফিকুরের সাথে কাঁধ মিলিয়ে অপরাজিত থেকেই দিন শেষ করেন মিরাজ। ভারতীয় বোলারদের দক্ষতার সাথেই সামাল দিয়েছেন তিনি। সামাল দিতে গিয়ে বাউন্ডারির দিকে বেশি নজর ছিলো মিরাজের। ফলে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫১ রানে অপরাজিত থেকে যান। তার এই ৫১ রানের ৪০ রানই এসেছে বাউন্ডারিতে।অন্যপ্রান্তে অধিনায়ক মুশফিকুরের ব্যাট ছিলো অবিচল। ১২টি চারে ২০৬ বল মোকাবেলা করে ৮১ রানে দিন শেষ করেন মুশি। ভারতের উমেশ যাদব ৭২ রানে ২ উইকেট নেন।