আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন,জনগণের চাওয়া অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নতুন আইন করার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পত্তির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মন্ত্রী তা স্পষ্ট করেননি।বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেনএ ব্যাপারে আনিসুল হক বলেন, জনগণ কী দাবি করছে, তা তিনি ভালো করেই জানেন। এ ক্ষেত্রে নতুন আইন করাই শ্রেয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের যে দাবি উঠেছে সে বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়াতেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

এজন্য নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তির বিষয়ে জনগণের দাবি উঠেছে। আমরা জনগণের সরকার, এ সরকার আসনে বসেছে যেন জনগণের মুখে হাসি ফোটে।সম্পত্তির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করছি। খুব দ্রুততার সাথে করা হবে বা বিলম্ব হবে তা বলছি না, আমরা চাইবো তাড়াতাড়ি করার।একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে আসা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন।সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর তাদের সে দাবি আরও জোরাল হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।‘জনগণের দাবি’ পূরণে যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক- তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আইনের মধ্যে একটি সুযোগ করা যেতে পারে বা নতুন আইন করা যেতে পারে।আইনটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্যই করা হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, আমি বাজেয়াপ্ত করার কথা বলিনি, বাজেয়াপ্ত করা হবে কি না- তা কোর্ট নির্ধারণ করবে।

যেসব যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে, মুসলিম আইনে তাদের সম্পত্তি সন্তানদের মালিকানায় চলে যাওয়ায় আইন সংশোধনের বদলে নতুন আইন করাই শ্রেয় হবে বলে মত দেন মন্ত্রী।জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭৩ সংশোধন করা হচ্ছে। জামায়াত সংগঠন হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। জামায়াতের বিচার করতে উপযুক্ত আইন করতে হবে।ওই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।আইনমন্ত্রী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠনের বিচারের লক্ষ্যে আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে। জামায়াতের বিচারের জন্য উপযুক্ত আইন করা হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন মন্ত্রী।দুই মন্ত্রীর শপথভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, তিনি মনে করেন, তাঁদের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার প্রয়োজন নেই।

সম্প্রতি এক বিচারপতির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারে সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গকারী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পদত্যাগ করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।দুই মন্ত্রীর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপিদের ডিসকোয়ালিফিকেশনের বিষয়ে আর্টিকেল ৬৬ (সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ) এ ক্লিয়ারলি দেওয়া আছে।ৃ সেই ডিসকোয়ালিফিকেশনের মধ্যে আমাদের মাননীয় মন্ত্রীগণ পড়েন না, এই সাজার পরেও।আনিসুল বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স কিন্তু খুব কম। এখানে শপথ ভঙ্গের জন্য এমন কোনো দন্ড নেই যে তা করলে তাদেরকে এটা করতে হবে। এ রকম কোনো আইনও নাই, বিধানও নাই, এমনকি কোনো কনভেনশনও নাই।আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তিনি খুব সাবধানে কথা বলতে চান, যাতে আদালত অবমাননা না হয়। আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন। পাঁচজন বিজ্ঞ বিচারপতি বলেছেন যে শপথ ভঙ্গ হয়েছে, তারা কিন্তু বলে দেন নাই যে শপথ ভঙ্গের কারণে তাদের মন্ত্রিত্ব নাই।ৃ তারা বলেছেন, অবমাননার কারণে তারা যে ক্ষমা চেয়েছিলেন তা গ্রহণ না করে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

তিনজন মাননীয় বিচারপতি শপথ ভঙ্গের ব্যাপারে একমত হন নাই। তারা পরিষ্কার বলেছেন, যখন তাদের বিচার করা হচ্ছিল তখন এই ইস্যুটা (শপথ ভঙ্গ) সামনে আসে নাই, এই ইস্যুটা নিয়ে কোনো রুল ইস্যু করা হয় নাই। যেহেতু রুল ইস্যু করা হয় নাই এটাকে বিবেচনায় আনাই আইনসম্মত না, কারণ তাকে জবাব দেওয়ার অধিকার দেয় নাই।ফাঁসি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিল রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য কামরুল-মোজাম্মেলকে অবমানার দায়ে সাজা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। গত ২৭ মার্চ দেওয়া ওই রায় গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন।তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

আদালতের রায়ে শপথ ভঙ্গ হওয়ায় দুই মন্ত্রী পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে মত দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। বিএনপির পক্ষ থেকেও দুই মন্ত্রীর অপসারণ চাওয়া হয়।এ বিষয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছেন ইউনুছ আলী আকন্দ নামের এক আইনজীবী।রায়ের বিষয়ে মোজাম্মেল শনিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি জেনেশুনে’সংবিধান লঙ্ঘন করেননি।আর কামরুল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই বিচারের পক্ষে আছি, থাকব। বিচার প্রত্যাশীদের পক্ষে আমার মুখে কথা বলেই যাব।