রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চার মাস আগে সহিংস অভিযান শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই অভিযানে সম্ভবত এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানকে সম্ভাব্য জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা ও চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান শেষ করার ঘোষণা এল।রাখাইনে সেনা অভিযান শেষ করার বিষয়ে গতকাল বুধবার রাতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সু চির কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।বিবৃতিতে জানানো হয়, মিয়ানমারের সেনারা রাখাইনে অভিযান শেষ করেছে। তারা এলাকাটি ত্যাগ করেছে। এলাকাটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। দেশটির নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাং তুনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়, উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। সেনাবাহিনীর চালানো উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়েছে। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। শান্তি রক্ষায় সেখানে কেবল পুলিশ রয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ফৌজদারি অপরাধের ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত থাকতে পারে না। কোথাও নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত, তা প্রমাণিত হয়েছে।রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধের তথ্যের সত্যতা দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে এলাকাটিতে সেনাবাহিনী রয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।গত বছরের ৯ অক্টোবর রাখাইন সীমান্তে একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে পুলিশের ৯ সদস্যসহ ১৪ জন নিহত হন। হামলার পর রাখাইনে সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে দেশটির সেনারা রাখাইনে জাতিগত নিধন শুরু করে বলে অভিযোগ ওঠে।রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের বিস্তর অভিযোগ সামনে আসতে থাকে।তবে শুরু থেকেই সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস দমন-পীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবি করে, আইন মেনেই রাখাইনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে।জাতিসংঘের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে জানান, রাখাইনে সহিংস অভিযানে সম্ভবত এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে দমন-পীড়নের মুখে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কঠোর সমালোচনা ও চাপে পড়েছে মিয়ানমার।