ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া নিয়ে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সমস্ত সরকারী নীতিমালা, বিধি-বিধান ভঙ্গ করে ৮ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। ৮জন মুক্তিযোদ্ধা প্রথম থেকেই ভাতা প্রাপ্ত ও সরকারী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে। মুক্তিবার্তা, ভারতীয় লালতালিকা, গেজেট নাম, ভারতীয় প্রশিক্ষণ সহ মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট থাকা স্বত্ত্বেও বিনা নোটিশে তাদের ভাতা স্থগিত করেছে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

ভাতা স্থগিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন কুশবাড়িয়া গ্রামের মকছেদ মোল্যা, একই গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক মোল্যা, ছোট ধলহরাচন্দ্র গ্রামের হারেজ আলী, একই গ্রামের লুৎফর রহমান, আকবার আলী, চাঁদ আলী, জালশুকা গ্রামের জে,এম, আকতারুজ্জামান ও মথুরাপুর গ্রামের আবুল হোসেন। এসব মুক্তিযোদ্ধা হঠাৎ ভাতা বঞ্চিত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তাদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বন্ধের পূর্বে সরকারী নিয়মে তাদের লিখিত নোটিশ( কেন বন্ধ করা হবে না) করতে হয়। যাচাই-বাছাই কমিটি কোনরুপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে সম্মানী ভাতা বন্ধ বা স্থগিত করতে পারবেন না। গত ৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে এই আদেশ আসলেও তা মানা হয়নি। এছাড়া সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিও তদের নাম উল্লেখ করে কোন অভিযোগ তোলেনি। অন্যদিকে এসব মুক্তিযোদ্ধাদের যারা স্থানীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী হিসাবে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছে ৮/১০ বছর আগে। নতুন করে এদের কেউ কেউ এখন ভাতা না দেয়ার কাগজে স্বাক্ষর করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে এমনটি করা হচ্ছে। শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মনোয়ার হোসেন ও জেলার ডেপুটি কমান্ডার গোলাম রইচ এসব মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রত্যায়ন ও সকল সুযোগ সুবিধা পাবে উল্লেখ করলেও এখন তারা উল্টো দাবি অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা না উল্লেখ করছেন। এই ৮ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে আবুল হোসেন নামের মুক্তিযোদ্ধার বয়স কম বলে হাইস্কুল থেকে সনদপত্র নেয়া হয়েছে। সেই সনদে আবুল হোসেনের জন্ম তারিখ ৩১জুন ১৯৫৮সাল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জুন মাসে কোন ৩১ তারিখ হয় না।

আবুল হোসেন ১৭৭১ সালে ম্যালেশিয়াতে ভর্তি ও অস্ত্র জমাদান পত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে ১৫ জানুয়ারী ১৯৫৪ সাল, জাতয়ি পরিচয়পত্রে উল্লেখ আছে ১৫জানুয়ারী ১৯৫৪সাল, জন্ম সনদেও ১৫জানুয়ারী ১৯৫৪ সাল উল্লেখ আছে। কিন্তু ৩১জুনের এমন হাস্যকর অনেক মিথ্যা অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ করে টাকার বিনিময়ে সেখানে নতুনদের নেয়ার পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও সিংনগর গ্রামের তোজাম্মেল হোসেন, বগুড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেন, দুধসর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে এমন নানা কারণ দেখিয়ে। তাদেরও অন্যায় করে সরকারী বিধি ভঙ্গ করে ভাতা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করছেন জেলা থেকে শৈলকুপার ৫জনের ভাতা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে তবে কারো নাম এখনো উল্লেখ করা হয়নি কোন ৫জন অথচ হিংসার বশবর্তী হয়ে ৯/১০ জনের ভাতা আটকে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে, তাছাড়া কেউ কেউ রাজাকার হিসাবে অভিযোগ উঠেছে, তাই ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে। এদের অনেকে বিভ্রান্ত করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছিল সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। শৈলকুপার ইউএনও উসমান গনি জানিয়েছেন, এখনো কারো ভাতা বন্ধ করা হয়নি, যারা ভাতা পায়নি তারা পাবে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের নোটিশ করা হবে, সরকারী বিধি অনুযায়ী।

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহ