আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ, নির্বাচন বিশ্লেষক, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট হলে কারচুপির সুযোগ কম এবং বাঁচবে অর্থ ও সময় বলেও জানান তারা।শুক্রবার দেয়া সাক্ষতকারে সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন।কারচুপি এড়াতে প্রযুক্তির পাশাপাশি কাগজ ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, এ বিষয়ে বিএনপিকে বিরোধিতা না করে সব কিছু যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।তবে এক্ষেত্রে ডিভিএম নয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়া হোসেন।ডিভিএম নিয়ে বিএনপির বিরোধিতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার।অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সতর্কতার সঙ্গে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ভোটগ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহারের নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বিতর্ক এড়াতে ভোটিং মেশিনের পাশাপাশি কাগজের ব্যবহারও থাকতে হবে। এ পদ্ধতিতে কারচুপির সুযোগও কম।

এদিকে, আগামী নির্বাচনে কাগজ ব্যবহারের পরিবর্তে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা -সমালোচনা। সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপি এ নিয়ে আপত্তি তুলে বলছে, এটা দুরভিসন্ধিমূলক।এর আগে সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশন এ জন্য ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে চায় নির্বাচন কমিশন। কাগুজে ব্যালটের পরিবর্তে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যন্ত্র তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়েছে। যন্ত্রটির সম্ভাব্য নাম ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম)। বাংলাদেশে কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছোট আকারে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের নতুন রূপই হলো ডিভিএম।তবে এই পদ্ধতি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান দুই দিকে। আওয়ামী লীগ ই-ভোটিংয়ের পক্ষে থাকলেও বিএনপি এটিকে দেখছে কারচুপির যন্ত্র হিসেবে। গত ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ যন্ত্রে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল। গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।তবে এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটি দুরভিসন্ধিমূলক। নির্বাচনে কারসাজি করতে ভোট গ্রহণে যন্ত্রের ব্যবহার সরকারের একটি নতুন চাল। নিরক্ষর মানুষের ভোট নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার এটি করতে চাইছে।

আগের শামসুল হুদা কমিশন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আর সদ্য বিদায়ী রকিব কমিশন ডিভিএম পদ্ধতির কথা বলেছিল। তবে দুটি প্রায় একই। ডিভিএম পদ্ধতিতে কী কী সুবিধা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএমে যে কেউ যে কারও ভোট দিতে পারতেন। ধরার উপায় ছিল না। কিন্তু ডিভিএমে সেই সুযোগ থাকবে না।এখানে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। প্রথমে একজন ভোটার ওই যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দেবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডেটাবেইসের সঙ্গে ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। আঙুলের ছাপ মিললে ভোটার ভোট দিতে পারবেন। ওই ভোটার একটি ভোট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটি বন্ধ (লক) হয়ে যাবে। এরপর ওই ভোটার আর কোনোভাবেই আরেকটি ভোট দিতে পারবেন না। তা ছাড়া ডিভিএমে স্মার্ট কার্ড প্রবেশ করিয়েও ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

নির্ধারিত ভোটার ভোটকেন্দ্রে না গেলে বা কেন্দ্র দখল করে কোনো ভোটারের ভোট অন্য কারও পক্ষে দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বা বাক্সে ফেলার কোনো উপায় থাকবে না। এ ছাড়া আরেকটি সুবিধা হলো, আগের প্রস্তাবিত ইভিএম মেশিনের কারিগরি ত্রুটির কারণে ভোটের তথ্য মুছে যেত। কিন্তু ডিভিএমে এই সুযোগ থাকছে না। এখানে মেশিনের কারিগরি ত্র“টি হলেও এর সর্বশেষ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা হবে অনেকটা উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স-এর মতো। মেশিনের যত সমস্যাই হোক, সব তথ্য এখানে সংরক্ষণ করা হবে। মেশিন বিদ্যুতে চলবে। তবে ব্যাকআপ হিসেবে ব্যাটারিও থাকবে। যেসব স্থানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে ব্যাটারিতে চলবে।

২০১৬ সালের ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠকে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার নতুন প্রযুক্তি ডিভিএম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন ও বিতরণ অনু বিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন। এরপর সদ্য বিদায়ী কমিশন গত বছরের অক্টোবরে ১৯ জন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে। ডিভিএম কেমন হবে, আগের ইভিএমের তুলনায় ডিভিএমে কতটা বেশি সুবিধা থাকবে, ভোট গ্রহণ প্রশ্নহীন হবে কি না, সে ব্যাপারে মতামত দেবে কমিটি। কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। কমিটির মতামত ইতিবাচক হলে চলতি বছরই পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হতে পারে।জানতে চাইলে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যন্ত্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ আছে, চেষ্টা করা সত্ত্বেও যন্ত্রে ভোট দেওয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা যায়নি। তাই এটি খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। এখানে কেবল যন্ত্রের ব্যবহার রাখলে চলবে না। কাগজের ব্যবহার থাকতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যন্ত্রে আগে থেকে কারসাজি করার কোনো সুযোগ নেই। একটি ভোটের জন্য একবারই প্রোগ্রামিং (ওটিপি) করা হয়। ভোট শুরুর আগে কোনো যন্ত্রে কারসাজি করা হলে সেটা তো আর কাজই করবে না। একেকটি যন্ত্র তৈরিতে তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল সম্ভবত ২৪ হাজার টাকা, যা দিয়ে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যেত। ফলে ব্যালট ছাপানো, কালি, কলম, ব্যালট বাক্স কেনার খরচ বাঁচত। সময় তো বাঁচতই। তিনি বলেন, যন্ত্রে কাগজের ব্যবহার রাখা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে ভিভিপিএটি বা ভোটার ভেরিফিকেশন পেপার অডিট ট্রেইল বলা হয়। এতে অভিযোগ উঠলে মেশিন থেকে ভোটের তথ্য নেওয়া যাবে।

শামসুল হুদা কমিশন ইভিএমে ভোট নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সে সময় এ কাজে বুয়েট ও বাংলাদেশ মেশিন ট্যুলস ফ্যাক্টরিকে সম্পৃক্ত করা হয়। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার করা হয়। ওই কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করে। মূলত ভোট গণনার সময় কমিয়ে আনতে, ব্যালট ছাপানোর ঝামেলা কমাতে এবং ভোট কারচুপি বন্ধ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।সদ্য বিদায়ী রকিব কমিশন কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় সেখানকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেখানে কিছু অভিযোগ উঠলেও ভোট পুনরায় গণনার কোনো সুযোগ ছিল না। তারপর থেকে কমিশন ইভিএম ব্যবহারে পিছু হটে। ওই সময় নির্বাচন কমিশন ও বুয়েটের মধ্যে এই মেশিন নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। এ কারণেও ইভিএমের কাজ স্থগিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে ইসি নিজেদের আইসিটি শাখার লোকবল দিয়ে ইভিএমের নতুন প্রটোটাইপ (নমুনা) নিয়ে আসে।গত মঙ্গলবার বিদায় নেওয়া নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ডিভিএমে ভোট নেওয়ার বিষয়টি এখন কারিগরি কমিটির মতামতের অপেক্ষায় আছে। তাঁরা কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছেন। এই মেশিন নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে, সে জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা কমিটি দেখবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।জানতে চাইলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের চিন্তা চলছে। এ জন্য ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী কমিটিও করা হয়েছে। তাঁর মতে, ডিভিএম এমন একটি যন্ত্র, সেখানে কারচুপির কোনো সুযোগ থাকবে না। ভোটের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হবে। ভোটারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত ডিভিএম চালু হবে কি না, তা নির্ভর করছে কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করার চিন্তা বা পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এতে দুরভিসন্ধি আছে। এই পদ্ধতি চালু হলে ভোট কারসাজি করা সরকারের জন্য সহজ হবে।বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে দলটির এই অবস্থানের কথা জানান জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ই-ভোটিং করার যে কথা বলেছেন, এটি সরকারের ভোটারবিহীন নির্বাচন করার আরেকটি ডিজিটাল প্রতারণা কি না, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) ঘোষণা জনগণকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়।

গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতি রেখে মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।এর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রিজভী দাবি করেন, এটি জনগণের ভোটকে নিজ উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টামাত্র। এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেলকিবাজিরই বর্ধিত প্রকাশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন জনগণের দৃষ্টিকে সিইসির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) দিক থেকে অন্যত্র সরানোর জন্য ই-ভোটিং ব্যবস্থার আরেকটি ম্যাজিক জনগণের সামনে প্রদর্শন করছেন।রিজভী নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা সম্পর্কে বলেন, ‘উনি কে? বিসিএস ৭৩ ব্যাচের অফিসার। ৭৩ ব্যাচের ডাকনাম হচ্ছে তোফায়েল সার্ভিস। অর্থাৎ কোনো পরীক্ষা-টরীক্ষা নাই, জাস্ট সুপারিশ দিয়ে এটা করা হয়েছে। এরা চাকরিজীবনে কোনো যোগ্যতাই দেখাতে পারেন নাই। সেই ব্যক্তিকে সিইসি করা হয়েছে, তাদের (আওয়ামী লীগ) কথা অনুযায়ী চলবে বলে।

বিএনপির এই নেতা বলেন,এক-এগারোর সময়কার সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) চালুর প্রস্তাব করেছিলেন। তখন বুয়েটসহ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দল সেটির বিরোধিতা করেছিল। সদ্য বিদায়ী সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও এই পদ্ধতিটি চালুর জোর প্রচেষ্টা চালান। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে প্রথম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে এই পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হয়। ওই সময়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলায় কাজী রকিবউদ্দীন ইভিএম চালু থেকে সরে আসেন।রিজভী বলেন, ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলেও এর বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে দূর থেকে হ্যাক করা সম্ভব বলেই স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে সেসব দেশে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ নিরক্ষর।এত টেকনিক্যাল বিষয় বোঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এই পদ্ধতিতে ই-ভোটিংয়ের সার্ভার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সুতরাং, সরকারের জন্য ভোট ম্যানিপুলেট (কারসাজি) করা খুবই সহজ হবে।

ই-ভোটিং বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক অন্যান্য দলও প্রথম আলোর কাছে প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, ইভিএম পদ্ধতির অনেক ত্র“টি আছে। ত্র“টিগুলো সেরে একটি কারণে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। আমার চন্দনাইশ পৌরসভায় ভোর পাঁচটায় ভোট হয়ে গেল। অন্তত এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ই-ভোটিং হতে পারে।এই বিষয়ে বিএনপি জোটের বাইরের ধর্মভিত্তিক দুটি দল ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান ভিন্ন। গত বছরের জানুয়ারিতে বিএনপি জোট ছেড়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে। কারণ, এখন সবকিছুই আধুনিক পদ্ধতিতে হচ্ছে। আর ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইভিএম বিষয়টি ভালো। তবে এখানে চাতুরতার সুযোগ আছে। এ জন্য এ পদ্ধতিকে অ-বিতর্কিত বলা যায় না।