%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a7%ab-%e0%a6%89%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%9f-%e0%a6%a4%e0%a6%ac%e0%a7%81-%e0%a6%8f%e0%a6%97%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87

লিড নিতে না পারাটাই কি শেষ পর্যন্ত কাল হতে চলেছে বাংলাদেশের! অবস্থাদৃষ্টে তো তেমনই মনে হচ্ছে। আজ সকালে মাত্র ২৭ রান যোগ করতেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানের লিড উপহার দেওয়ার খেসারতটা তো দিতেই হবে। শনিবার টেস্টেও তৃতীয় দিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরেও বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর দারুণ এক জুটিতে লিডটাকে এখনো পর্যন্ত নিয়ে গেছে ২৫০-এ। বিপর্যয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পরেও এই দুইয়ের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের লক্ষ্যটাকে আস্তে আস্তে কঠিনই করে তুলছে ইংলিশরা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ২০৫।চট্টগ্রামের উইকেট যে আচরণ করছে, তাতে এতে চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রান তাড়া করাও অনেক কঠিন হবে। বাংলাদেশের স্পিনাররা উইকেট থেকে যথেষ্ট সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। ভুলে গেলে চলবে না, ইংল্যান্ডের মঈন আলী ও আদিল রশিদ আছেন। এই দুজন ছাড়াও ইংল্যান্ডের তো উইকেট তুলে নেওয়ার অনেকেই আছেন

সকালটা ছিল বিষাদমাখা। সাকিব আল হাসানের হাত ধরে একটু করে কাটছিল সেই হতাশার মেঘ। দারুণ একটি জুটিতে দুপুর থেকে বিকেল গড়াতেই আবার ঘনিয়ে এল আধার। শেষ বিকেলে একটু আলোর রেখা দেখালেন সেই সাকিবই।তবে খুব তীব্র নয় সেই আলো; বরং যেন বেশ দূরের আশার বাতিঘর। ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। কিš‘ দিনের নায়ক বেন স্টোকস। রিভার্স সুইংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনীতে সকালে ছেটে দিয়েছেন বাংলাদেশের লেজ। পরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়েছেন জয়ের পথে।শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২২৮ রান তুলে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের লিড মিলিয়ে ইংলিশরা এগিয়ে ২৭৩ রানে। এই মাঠেই প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানে গুটিয়ে যাওয়া নিউ জিল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে শেষ ইনিংসে ৩১৭ রান তুলে। তবে পারিপার্শ্বিকতা এবার ভিন্ন। উইকেটে চিড় আর ধুলোর ঝড় বলছে, আচরণ নাটকীয়ভাবে না বদলালে এই উইকেটে শেষ ইনিংসে এখান দুইশ’ রান করাও কঠিন! জিততে হলে শেষ ইনিংসে বাংলাদেশকে করতে হবে অসাধারণ ব্যাটিং। তার আগে দ্রুত তুলে নিতে হবে বাকি দুটি উইকেট।বাংলাদেশের সকালটা শুরু হয়েছিল এক সমুদ্র আশা নিয়ে। ৫০-৭০ রানের লিড পেলেও ভীষণ চাপে পড়ে যেতে ইংল্যান্ড। সেই আশার সাগর শুকিয়ে গেল সাত সকালেই। দিনের দ্বিতীয় বলেই ব্যাখ্যাতীত এক দৃষ্টিকটু শটে আউট সাকিব। বাকি সব উইকেটও ঝরে গেছে টুপটাপ।

হতাশাটা পাশে রেখে সাকিব জ্বলে উঠলেন বল হাতে। শুরুটা যদিও প্রথম ইনিংসের মতোই মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে। এশিয়ায় রেকর্ডটা দুর্দান্ত হলেও এই টেস্টে দ্বিতীয়বারের মত ব্যর্থ অ্যালেস্টার কুক। স্লিপে নীচু হওয়া বলটি দারুণ দক্ষতায় লুফেছেন মাহমুদউল্লাহ।পরের ওভারেই আরেকটি বড় সাফল্য। স্পিনে দক্ষ জো রুট এলবিডব্লিউ সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির এটি ১৫০তম টেস্ট উইকেট। দেড়শ’ ছাড়িয়ে যেতেও লাগেনি সময়। নিজের পরের ওভারেই সাকিব ফেরান বেন ডাকেটকে। দিনের শুরুর সাফল্যের হাসি তখন অনেকটাই ম্লান ইংল্যান্ডের। লাঞ্চ বিরতিতে যায় তারা ৩ উইকেটে ২৮ রান নিয়ে।দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় ধরা দিয়েছে আরও দুটি উইকেট। তাইজুল ইসলামের প্রথম ওভারেই বিদায় গ্যারি ব্যালান্স। লেগ স্লিপে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় কাচ নেন ইমরুল কায়েস। জমে ওঠার আগে মইন আলিকে ফেরান সাকিব। ইংল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ৬২। ইনিংসের অর্ধেক হারিয়ে লিড পেরিয়েছে মাত্র শতরান। বাংলাদেশ দেখছিল স্বপ্ন! সেটি মিলিয়ে গেল বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে। দুজনের দুর্দান্ত জুটিতে একটু একটু করে দূর হলো ইংলিশদের শঙ্কা, আর ঘনীভূত হলো বাংলাদেশের হতাশার মেঘ।

প্রতিকূল উইকেট-কন্ডিশনে অসাধারণ ব্যাট করেছেন দুজনই। একটু একটু করে দুজন ম্যাচ থেকে দূরে ঠেলতে থাকেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ সামলেছেন দারুণভাবে। ম্যাচের প্রথম শতরানের জুটি উপহার দেন দুজন।ম্যাচটা যখন পুরোই বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে, কিছুটা আশা জাগল শেষ বিকেলে। পেস বোলিংয়ে এই টেস্টে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনলেন বেয়ারস্টো (৪৭)। ভাঙল ১২৭ রানের জুটি।ইনিংসটির পথেই বেয়ারস্টো গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে (১ হাজার ৪৫)। এ বছর টেস্টে হাজার রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও বেয়ারস্টোই (১ হাজার ৯১)।সঙ্গীকে হারানোর খানিক পর বিদায় নিলেন স্টোকসও। সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ ৮৫ রানে। খানিক পর আদিল রশিদকে ফিরিয়ে সাকিব পূর্ণ করলেন টেস্ট ক্রিকেটে তার পঞ্চদশ ৫ উইকেট। ক্রিস ওকস আর স্টুয়ার্ট ব্রড কাটিয়ে দেন দিনের শেষ সময়টুকু।বাংলাদেশের সামনে হিসাবটা সহজ হতে পারত আরও, যদি প্রথম ইনিংসে পূরণ হতো নিজেদের চাওয়া। দিন তারা শুরু করেছিল ৫ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে। চাওয়া ছিল অন্তত ৫০-৭০ রানের লিড। সেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু দিনের দ্বিতীয় বলেই। যার দিকে তাকিয়ে ছিল দল, সেই সাকিব আল হাসান আউট হলেন পাগলাটে এক শটে। দিনের দ্বিতীয় বলেই অফ স্পিনার মইন আলিকে বেরিয়ে এসে মারতে চাইলেন তেড়েফুড়ে। বল থাকল না ব্যাটের ধারে কাছেও। এতটা সহজ স্টাম্পিংয়ে এত বড় শিকার ধরার সুযোগ জনি বেয়ারস্টো হয়ত আর পাননি!সম্ভাব্য নাবিককে হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসও হারাল পথ। অভিষিক্ত সাব্বির রহমান পারেননি শেষ দিক ঝড় তুলতে, টিকতে পারেননি আরেক অভিষিক্ত মিরাজ।স্পিন নয়, বাংলাদেশের লেজ ছেটে দিয়েছে বেন স্টোকসের রিভার্স সুইং। স্পিনের টেস্টে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার তিনিই। দেখিয়ে দিলেন স্কিল থাকলে জ্বলে ওঠা যায় এমন উইকেটেও!তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশ খেলতে পেরেছে ১২ ওভার, যোগ করতে পেরেছে আর মাত্র ২৭ রান। আগের দিন শেষ বিকেলে মুশফিকুর রহিমের বিদায় থেকে বাংলাদেশ শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ২৭ রানেই!হতাশার শুরু যার হাত ধরে, আশার সঞ্চারও করেছেন তিনি। তবে অসাধারণ বোলিংয় শুধু একটি অধ্যায়। ব্যাটিংয়ে বড় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে ব্যাট হাতে শেষ ইনিংসে দারুণ কিছু করলেই। পারবেন সাকিব?