২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। যদিও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।গণহত্যা দিবস পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সবার রয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দিবসটির প্রস্তুতি জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ক্তাক্ত ২৫ মার্চ, গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা হবে। এ প্রদর্শনী দুদিন থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শহীদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পস্তবক দেওয়া হবে। তবে এবার শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে ২৬ মার্চ ভোরে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।দিবস ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যার যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, সে কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেলে বন্দী করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ তাঁদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশ নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। জাসদের সাংসদ শিরীন আখতার ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তোলেন। সাত ঘণ্টা আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।সোমবার আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালনের জন্য ইতোমধ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন। গত সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত একটি দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে গণহত্যা দিবস পালনের এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।মন্ত্রিসভার অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ায় এখন থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হবে।এ বছর থেকেই তা শুরু হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেটা বলতে পারবে। আমরা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, কারণ তাদের প্রস্তুতি আছে কি না জানি না।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ক শ্রেণিভুক্ত দিবসে সরকারিভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ খরচ করা যায়। কারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তার বিবরণও সেখানে লিপিবদ্ধ আছে।দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, জাতিসংঘে এ সংক্রান্ত একটি সংস্থা আছে। তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবির মধ্যেই জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তোলেন।তার প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হউক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হউক। সেদিন প্রায় সাত ঘণ্টা আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে পাস হয়।