ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বিক্ষোভ বিরোধী আইন পাস

ইউক্রেনের সামপ্রতিক বিক্ষোভে আটক ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করে দেশটির পার্লামন্টে বিক্ষোভ বিরোধী একটি আইন পাস করা হয়েছে৷গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সরকার বিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে তার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এই আইনটি পাস করলো সেদেশের সরকার৷এদিকে নতুন এ বিলের বিরুদ্ধে রবিবার রাজধানী কিয়েভে বড় ধরনের সমাবেশ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির বিরোধী পক্ষ৷

এ আইনে অনুমতি ছাড়া জনসমক্ষে তাবু খাটিয়ে অবস্থান করাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনাকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে৷

পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে প্রচলিত ইলেকট্রনিক পদ্ধতির পরিবর্তে হাত উঁচিয়ে বিলটির পক্ষে বিপক্ষে ভোট নেয়া হয়েছে৷ সরকার বিরোধীরা আইনটি অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, ক্ষমতাসীন দল অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে৷নতুন বিলটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷

ইউক্রেনের পার্লামেন্টে পাশ হওয়া বিলে শর্ত দেয়া হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা যেসব ভবন দখল করে আছে সেগুলো ছেড়ে যেতে হবে৷ তবে বিলটি প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিরোধী পক্ষ৷ এমনকি রাজধানীর রাস্তায় যেসব বিক্ষোভকারী ছিলেন তারাও রাস্তা থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন৷ এবং আগাম নির্বাচনের দাবিও জানাচ্ছেন তারা৷দেশটির বিরোধী দল সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে বিক্ষোভ আন্দোলন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠবে৷

নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানোকোভিচ রাশিয়ার অনুকূলে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য চুক্তি থেকে বিরত থাকায় ওই বিক্ষোভ শুরু হয়৷ রাশিয়ার চাপের মুখে শেষ মুহূর্তে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইউনোকোভিচ ইউ\’র সাথে চুক্তি বাতিল করে দেয়৷ এতে দেশটিতে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ গত প্রায় দুই মাস ধরে স্বাধীনতা চত্বরে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষ৷ এছাড়া ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া সরকারি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানায় তারা৷ বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হলে সরকারি দলের সাথে সমাজতান্ত্রিক ও বেশ কিছুসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী এর পক্ষে ভোট দেন৷ এসময় বিরোধী দলের নেতা এ ভোট বন্ধে প্রতিবাদ জানালে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও পাস হয় বিলটি৷

কয়েকমাসের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার দেশে অস্থিরতা নিরসনের চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী মাইকোলা আজারভ ও তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে৷গত কয়েকমাসের সহিংস বিক্ষোভে অন্তত কয়েকনের মৃত্যু হয়েছে৷ ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে৷

নতুন এই বিলটি পাশ হলেও দেশটির পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি৷ বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান করবে বলেও জানাচ্ছেন তারা৷

এদিকে ইউক্রেনে নতুন সরকার গঠনের আগে, রাশিয়া তার চুক্তির বিষয়ে অগ্রসর হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো৷ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমপ্রসারণ বিষয়ক কমিশনার স্টিফেন ফুয়েলে বলেছেন, মানুষের প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে পাস করা এ আইন উদ্বেগজনক৷ অন্যদিকে ইউক্রেনের সরকার বিরোধীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে,এ আইন পাসের ফলে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে৷ তারা আগামী রোববার রাজধানী কিয়েভে বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন৷

গত দু’দিনে সরকার বিক্ষোভকারীদের তিনটি বড় দাবি মেনে নোর পরও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অটল রয়েছেন সরকার বিরোধীরা৷ পার্লামেন্ট সদস্যরা কারাগারে আটক বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার বিল পাস করার পরও বৃহস্পতিবার কিয়েভে অবস্থান ধর্মঘটকারীরা সরে যাননি৷

বুধবার পার্লামেন্টে ব্যাপক বিতর্কের পর কারাগারে আটক বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব পাস হয়৷ অবশ্য সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও বিরোধী এমপিরা ভোটদানে বিরত থাকেন৷ তারা বলেন, আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যাপারে আন্দোলন বন্ধের শর্ত জুড়ে দেয়ায় তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়৷তারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে৷

এর আগে ইউক্রেন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলে বুধবার মন্তব্য করেন দেশটির স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ক্র্যাভচুক৷ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী এ রাজনীতিবিদ বলেন, চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রত্যেককে ‘সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা’র সঙ্গে কাজ করতে হবে৷

@রেজওয়ান