image_50052.sheikh hasina31প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সন্ত্রাসী ও জঙ্গিকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন করে ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার পুলিশ সদস্য ও বাকিদের পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি আজ শনিবার সকালে এখানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত পাঁচ বছরে সরকার পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করে তুলেছে এবং একই সময়ে ৬১৪টি ক্যাডার পদসহ ৩১ হাজারেরও বেশি নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। দেশের সকল থানাকে (পুলিশ স্টেশন) আরো কার্যকর সেবাকেন্দ্র করতে এগুলোর সংস্কার করা হবে বলেও জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সারদাসহ দেশের সব পুলিশ কেন্দ্রকে আধুনিক করা হয়েছে। এ ছাড়া জনগণ যাতে ভালো সেবা পায় সে লক্ষ্যে দেশের সব পুলিশ কেন্দ্র সংস্কার করা হবে।
জনগণের আস্থা অর্জনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে ক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, সমাজের নারী, শিশুসহ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আপনাদের আচরণ হতে হবে সংবেদনশীল। এ ছাড়া জনগণের সমস্যাকে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কঠোর হাতে দমন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
গত কয়েক বছরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দল যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে তখন রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ এসব জঙ্গিদের আস্কারা দিয়েছে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা শুরু হয়েছে। আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তঋণ শোধ করবো। দেশকে কলঙ্কমুক্ত করব।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে বিচেনা করে। তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা ও অপরাধের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের আধুনিকায়ন করেছি। উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং একাডেমির অধ্যক্ষ নাঈম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি সেরা শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। তিনি পুলিশ অফিসার মেস প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। শিক্ষা সমাপনী কোর্সে ২৪ নারীসহ মোট ১৭৬ সহকারী পুলিশ সুপার পাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই কোর্সের সেরা পুলিশ কর্তকর্তাদের মাঝে পদক বিতরণ করেন এবং তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান। সহকারী পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন প্যারেড কমান্ডার হিসেবে প্যারেড পরিচালনা করেন।
প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে মো. আতিকুল হক প্রধান ‘বেস্ট প্রবেশনার’ পদক এবং এম রুহুল আমিন সরকার ও শাহেদ আহমেদ ‘বেস্ট ইন একাডেমিক’ পদক ও ‘বেস্ট রাইডার’ পদক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন।
বিএনপি-জামায়াতের হামলা থেকে জানমাল রক্ষায় পুলিশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের হাতে ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত ও প্রায় তিন হাজার আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, যৌথবাহিনী সন্ত্রাস মোকাবেলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তা সত্ত্বেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে সাম্প্রদায়িক শক্তি হামলা করেছে। তিনি বলেন, তার সরকার এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে শিল্প পুলিশ, পর্যটন পুলিশ ও নৌ পুলিশ গঠন এবং অপরাধ তদন্তের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গঠন করেছে। এর পাশাপাশি ভিআইপি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদারে দুটি সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও সার্জেন্টদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে। আইজিপির পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় এবং পুলিশ বিভাগের দুটি গ্রেড-২ পদকে গ্রেড-১ পদে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিগত শাসনামলে দেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এখন উন্নয়নের দ্বিতীয় ধাপে পদার্পণ করেছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ ও উন্নয়নের মডেলে পরিণত করতে চাই, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জনগনের শান্তি নষ্ট করতে সবরকম অপচেষ্টা চালিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অপশক্তি আন্দোলনের নামে আমাদের সকল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, তবে তাদের দেশি-বিদেশি প্রভু, লবিস্ট, সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও দলীয় বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী প্রচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাদের কোনো জনসমর্থন নেই।
দেশের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে জনগণ আবারো আমাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৪ সালে বিএনপির শাসনামলে চট্টগ্রামে ১০-ট্রাক অস্ত্র আটক করে সাহস ও দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই কাজ করে পুলিশ দেশকে রক্ষা করেছে।