eusuf-adjust_67394১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ (৮৯) মারা গেছেন। আজ রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া  এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ কে এম ইউসুফকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গুরুতর হূদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ‘ব্লাড প্রেশার ও পালস’ (রক্তচাপ ও স্পন্দন) পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসপাতালের হূদরোগ বিভাগের সিসিইউতে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
ইউসুফের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ কে এম ইউসুফ মারা গেছেন।
ইউসুফ আলীর চিকিত্সায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন তাঁর জামাতা মেজর (অব.) আবদুল ওহাব। তিনি দাবি করেন, একজন রোগী হিসেবে এ কে এম ইউসুফের যে ধরনের চিকিত্সা পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি। তিনি জানান, মরদেহের ময়নাতদন্ত যেন করা না হয়—এ মর্মে নির্দেশ চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ আসার পর এবং বিদেশে থাকা তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ে দেশে ফেরার পর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইউসুফ আলীর আট সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ে আমেরিকা এবং দুই মেয়ে দুবাইয়ে থাকেন।
ইউসুফের জামাতা জানান, ট্রাইব্যুনাল থেকে নির্দেশ আসার পর ধানমন্ডির ৯/এ গোলাপ ভিলায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। জানাজা ঢাকাতেই হবে। তবে দাফন কোথায় হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। খুলনায় নেওয়া হতে পারে। কোথায়, কখন লাশ দাফন করা হবে—তা পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও জানান, আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের খবর দেওয়া হয় এ কে এম ইউসুফ অসুস্থ।
এদিকে ইউসুফের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ ময়নাতদন্ত না করতে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হলেও ট্রাইব্যুনাল তা নাকচ করে দেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য বিকেল চারটা ৪০ মিনিটে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে এ কে এম ইউসুফের আইনজীবী তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘তাঁর (ইউসুফ) শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা অনেকবার ট্রাইব্যুনালে জামিন চেয়েছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল জামিন না দিলেও আল্লাহ তাঁকে জামিন দিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগের চিকিত্সকেরা তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করার কথা বললেও সিসিইউ থেকে বলা হয়, সেখানে সিট নেই।
কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা তাঁকে রিসিভ করেছি ১১টায়। আর তিনি মারা গেছেন সাড়ে ১১টায়। একজন ৮৯ বছর বয়স্ক ব্যক্তি হূদরোগে আক্রান্ত হলে কত সময় পাওয়া যায়? তাজুল ইসলামের অভিযোগ সঠিক নয়। সিসিইউতে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।’
একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত জামায়াতের নেতা ইউসুফের বিরুদ্ধে গত বছরের ১ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৩টি অভিযোগ গঠন করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটির কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা ছিল।
ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, ইউসুফ রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও খুলনা শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। তিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বাগেরহাটের ভাষাবাজার, কচুয়া, শাঁখারীকাঠি বাজার, রায়েন্দাবাজার, তাপালবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্মান্তরকরণসহ নানা ধরনের অপরাধ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-১ ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করেন।
গত বছরের ১২ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে। ট্রাইব্যুনাল তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁকে কারাগারে পাঠান।