plane-hijack_2815584k

জঙ্গিহানার ভয়ে এমনিতেই কাঁটা রাশিয়া। সোচি অলিম্পিকের শুরুতেই সাবধান করে দিয়েছে আমেরিকা। এর মধ্যেই আবার নয়া চাঞ্চল্য। বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা করলেন জনৈক যাত্রী। বললেন, কথা না শুনলে সেলফোন থেকে উড়িয়ে দেবেন বিমান। তাঁর মনোবাঞ্ছা অবশ্য পূরণ হয়নি। তাঁকে বোকা বানালেন বিমানের কর্মীরাই। পুলিশের জালে বন্দি ‘সন্ত্রাসবাদী’।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার ইউক্রেন থেকে তুরস্কগামী একটি বিমানে। পেগাসাস এয়ারলাইনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ভিড়ে ঠাসা। ১১০ জন যাত্রী নিয়ে বিমান যখন মাঝ আকাশে, হঠাৎই আসন ছেড়ে উঠে পড়লেন এক ইউক্রেনীয় যাত্রী। বয়স বছর ৪৫ হবে। আশপাশের লোকজন তখনও টের পাননি কী ঘটতে চলেছে। কেউ গান শুনছেন, কেউ বা ম্যাগাজিন ঘাঁটছেন। অনেকে নিজেদের মধ্যেই কথায় ব্যস্ত।

ছন্দপতন ঘটল ইউক্রেনীয় লোকটির চিৎকারে “এখনই উড়ান সোচির দিকে ঘোরাও।” এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন বন্ধ ককপিটে। ব্যর্থ হতেই ফের হুমকি বিমানে বিস্ফোরক রয়েছে। কথা না শুনলে মোবাইল ফোন থেকে উড়িয়ে দেবেন গোটা বিমান। হতবাক যাত্রীরা। স্তব্ধ বিমান। সোচির রাস্তায় তখন আলোর রোশনাই, নাচ-গান-বাজির সমারোহে চলছে ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

turkish-airline-hijacker-300x200যাত্রীটিকে নিরস্ত করার বেশি চেষ্টা করেননি কর্মীরা। বরং তাঁর কথা মতোই সোচি-র উদ্দেশে রওনা হন পাইলট। সেই মতো ঘোষণাও করা হল। যাত্রীরাও যে যার মতো আতঙ্কে প্রহর গুনছেন। দুরুদুরু বক্ষে ভাবছেন কী হয়, কী হয়! শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঘোষণা করা হল, সবাই সিট বেল্ট বেঁধে বসুন। বিমান সোচিতে নামছে।  বিনা বাধায় নির্দেশ পালন করেছেন পাইলট-কর্মীরা। কাজে খুশি সন্ত্রাসবাদীকে এ বার আর্জি জানালেন খোদ পাইলট, বাচ্চা-বুড়ো-মহিলাদের যেতে দেওয়া হোক। মেনে নিলেন লোকটিও। কর্মীরা অবশ্য কায়দা করে বিমান থেকে নামিয়ে দিলেন সব যাত্রীকেই। বাইরে তখন প্রচুর পুলিশ, থিকথিক করছে মাথা। কিন্তু কই, তাঁরা তো কেউ রুশ নয়। তুরস্কের যাত্রীরা দেখলেন, দিব্যি তাঁদের ভাষাতেই কথা বলছেন বিমানবন্দরে উপস্থিত লোকজন। ঘোর কাটতে সময় লাগল কয়েক মুহূর্ত। আর তার পরই হতবাক যাত্রীরা। এতো সোচি নয়, ইস্তানবুলের সাবিহা গোকসেন বিমানবন্দর!

বিমানের ভিতরে তখনও উত্তেজনা। কায়দা করে সব যাত্রীদেরই বিমান থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। পড়ে রয়েছেন শুধু পাইলট ও বিমানকর্মীরা। এ বার বিমানে উঠল সেনা। বন্দি করল সেই ‘জঙ্গিকে’। আসলে জঙ্গিটিকে টেক্কা দিতে পাল্টা ছক কষে ফেলেছিলেন বিমানচালক। বিমান ‘ছিনতাই’ হতেই পাইলট খবর পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তুরস্ক প্রশাসনকে। ছক কষে ফেলে সেনা-পুলিশ। ঠিক হয়, সন্ত্রাসবাদীকে জানানো হবে বিমান সোচিতেই যাচ্ছে। কিন্তু বিমান নামবে ইস্তানবুলে!

ইতিমধ্যে খবর পাঠানো হয় যাত্রীদের পরিবারকে। সাবিহা গোকসেন-এ চলে আসে দু’টি যুদ্ধবিমান। পেগাসাসের বিমানটি নামতেই ঘিরে ফেলে তাকে। হাজির হয়ে যায় দমকল বাহিনী, ডাক্তার-অ্যাম্বুল্যান্স। তবে প্রয়োজন পড়েনি কোনও কিছুরই। পরিস্থিতি টের পেতে সেনার সঙ্গে সামান্য হাতাহাতি হয় সন্ত্রাসবাদীর। সেই পর্যন্তই। আর কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।

বিমানকর্মী-সেনা-প্রশাসনের তৎপরতায় স্বস্তিতে ইস্তানবুলের গভর্নর হুসেইন আবনি মুতলু। বললেন, “লোকটির উদ্দেশ্য কী ছিল, উত্তর মেলেনি। উনি শুধু নিজের দেশের হয়ে কিছু বার্তা দিতে চাইছিলেন বিশ্বকে।” কিন্তু তাতেই বা কী? বোমা তো মেলেনি! ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, তিনি মাতাল ছিলেন না। তবে কি অসুস্থ? পাগল? মুতলু জানালেন, উদ্ধার হয়েছে বিমান। তবে উদ্ধার করা যায়নি ছিনতাইবাজের মস্তিষ্কপ্রসূত ষড়যন্ত্রটি।