indexবাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো ভারতকে শত্রুপক্ষ না বানিয়ে যুদ্ধ অনুশীলন সম্পন্ন করেছে। সেখানে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ভারত সীমান্তকে বিবেচনা করা হয়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সীমান্তের তিন দিক ঘিরে থাকা ভারত সামরিক অনুশীলনে প্রতিপক্ষ হিসেবে আসবে তা বিস্ময়কর কিছু নয়। যুদ্ধ-অনুশীলন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের জন্য বড় মাপের একটি প্রশিক্ষণ। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৌশলগত দৃঢ়তা আনয়নে সেনাদের জন্য এ অনুশীলন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যুদ্ধ অনুশীলন চলাকালে শত্রুপক্ষের নামকরণ হয় না। তবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে কাকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করা হয়ে থাকে সেটা স্পষ্ট।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষাবিষয়ক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে ভারত। এ অবস্থায় যুদ্ধ অনুশীলনকে অপেক্ষাকৃত কম ভারতকেন্দ্রিক করাটা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যাবতীয় যুদ্ধকেন্দ্রিক মনোভাব যদি ভারতকে লক্ষ্য করে হয় তাহলে প্রতিবেশী দেশকে কিভাবে দেখা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক পরিকল্পনার চর্চা করে থাকে। সেখানে সেনাদল প্রতিরক্ষা রেখার পেছনে অবস্থান নিয়ে দখলকারী সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এটা স্বাভাবিকভাবে সংবেদনশীল একটি বিষয়, যেখানে মনোভাব পরিবর্তন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের সেনাপ্রধান ২০১২ সালে দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। যুদ্ধ অনুশীলনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরের কোনো স্থান চিহ্নিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সকল সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল যেসব কর্মকর্তার হাতে তারা প্রত্যেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সরকারি ওই কর্মকর্তা বিষয়টির প্রতি নির্দেশ করে মন্তব্য করেন, স্টাফ কলেজগুলো যেভাবে গঠন করা হয়েছে, সেখানে নিশ্চিতভাবে কর্মকর্তাদের ওই প্রশিক্ষণের প্রভাব ছিল। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হওয়ার পর এ বছর প্রথমবারের মতো ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এবং স্টাফ কলেজ অনুশীলনের বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এনেছে। ২৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধ অনুশীলন চলে ৭ দিন। ওই অনুশীলনে ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ভিত্তিতে শত্রুপক্ষ নির্বাচন করা হয়নি।
বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরের কোন একটি স্থানকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া পরবর্তী প্রজন্মের সেনা নেতৃত্বের একজন কর্মকর্তা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ভারতের প্রতি নমনীয় শেখ হাসিনার সরকার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বর্তমান সময়টি ভারতের জন্য সর্বাধিক আদর্শ সময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শীর্ষ এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে এটা আমাদের জন্য সোনালি সময়।