US-embassy-Dhaka_2_0
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দ-িত বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকি¯ত্মান দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এ ছাড়া ডিজিএফআই ও এনএসআই’র এই কর্মকর্তারা দুবাইভিত্তিক পাকি¯ত্মানি কোম্পানি এআরওয়াই গ্রুপ এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংসঠন উলফা নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমানের আদালত ঐ মামলায় সাবেক দুই মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসি দেয়। ছাড়া দ-িত আসামি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, দ-িত দু’জন আসামি তাদের জবানবন্দিতে আদালতের কাছে এসব বিষয় পরিষ্কার করেছেন।

বিচারক পর্যবেক্ষণের পক্ষে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি এনএসআই’র সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমা-ার সাহাবুদ্দিন আহমেদের ২০০৯ সালের ১৫ মে তৎকালীন মহানগর হাকিম আবু হান্নান এবং একই বছরের ১৩ ও ১৪ জুন মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির তথ্যকে রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের একাংশে আদালত এনএসআই’র দ-িত ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খানের জবানবন্দির প্রসঙ্গ তুলে ধরে উল্লেখ করেন, সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
আব্দুর রহিমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয় উল্লেখ করে বিচারক পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন, সাহাবুদ্দিনকে বদলির বিষয়ে আমেরিকান হাইকমিশনের দু’জন প্রতিনিধি পাঠিয়ে তদবির করেছিলেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আব্দুর রহিমের স্বীকারোক্তিটি উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে-দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের পর ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল আমি নিজ উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) জানাই যে, সাহাবুদ্দিন অস্ত্র চালানের সঙ্গে জড়িত এবং তাকে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাহার করে বিমানবাহিনীতে ফেরত পাঠাতে এবং পরবর্তীতে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলি। সাহাবুদ্দিনের পোস্টিং প্রক্রিয়াধীন থাকাকালে আমেরিকান অ্যামবাসেডর তার দু’জন প্রতিনিধির মাধ্যমে সাহাবুদ্দিনকে বদলি না করার জন্য জোরালো অনুরোধ করেন। আমি তাতে সম্মত হইনি।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা একই জবানবন্দির আরেক অংশে আব্দুর রহিম বলেন, ২০০৪ সালের মার্চ মাসে সাহাবুদ্দিন একদিন আব্দুর রহিমের অফিস কক্ষে এসে অনুপ চেটিয়ার বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করেন। আমার আগ্রহ না থাকায় সে আলোচনার কথা বাদ দিয়ে বলেন যে, আমাদের উলফাকে সাহায্য করা উচিৎ। আমি তার প্রস্তাবে ক্ষিপ্ত হয়ে বলি, বাংলাদেশ কি উলফাদের দিয়ে দেব? তখন তিনি মুখ কালো করে চলে যান।
জবানবন্দিতে আব্দুর রহিম আরও জানান, সাহাবুদ্দিন উপ-পরিচালক নিরাপত্তা এবং ডিজ’র পিএস হিসেবে একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনকালে অতি সন্তর্পণে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করেন এবং বিদেশি দূতাবাসের গোয়েন্দা অফিসারদের সঙ্গে সহজে মেলামেশা, তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান। তিনি পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত আইএসআই’র অফিসার ব্রিগেডিয়ার মগিজ উদ্দিন এবং কর্ণেল শাহেদ ‘মাহদুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন এবং ঘন ঘন মিটিংয়ের আয়োজন করেন। আমি আমার অফিসে এআরওয়াইয়ের কিউটিভি বেশি দেখতাম। তখন সাহাবুদ্দিন আমাকে এআরওয়াই’র লোকাল এজেন্ট হবার প্রস্তাব দেন। তারপর তিনি পাকিস্তানের আইএসআই অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের এনএসআই এবং পাকিস্তানের আইএসআই’র কোনো কোনো বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা হতে পারে মর্মে রুপরেখা তৈরি করে।
পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দিতে দ-িত আসামি লিয়াকত হোসেন, আব্দুর রহিম এবং রেজ্জাকুল হায়দারের প্রসঙ্গে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে।