image_51490.kolkata-bg20130514045649ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী কলকাতা হাইকোর্টে হামলা চালাতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক বার্তায় এ সতর্কবাণী করে।
নর্থ ব্লকের সতর্কবার্তার পরই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সোমেন মিত্রের নেতৃত্বে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা হাইকোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে হাইকোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির দায়িত্বে নিয়োজিত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী উপস্থিত ছিলেন।
কলকাতার বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক খবরে আজ বলা হয়েছে, হাইকোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। হাইকোর্টের নিরাপত্তা নির্বিঘœ করতে শ’খানেক সিসিটিভি, ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি পুলিশবাহিনী মোতায়েন থাকে। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তার অনেক ফাঁকফোঁকর রয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা, আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রশস্ত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা হানা দিলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের সামলানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
বছর তিনেক আগে দিল্লি হাইকোর্টে বিস্ফোরণের পরই অন্য আদালতগুলোতেও নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কলকাতা পুলিশ এরপর হাইকোর্টের নিরাপত্তার ঘাটতির দিকগুলি চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে বলা হয়েছিল, হাইকোর্ট চত্বরের সবচেয়ে বড় সমস্যা গাড়ি পার্কিং। পুলিশের হিসেবে ৫শ’র বেশি গাড়ি হাইকোর্টের আশপাশে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিদিন সেখানে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ বাবুঘাট অঞ্চলে বা গঙ্গার ধারে গাড়ি রাখার প্রস্তাব দিলেও আইনজীবীরা তাতে রাজি হননি। কলকাতা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ রয়েছে। তার মধ্যে জাজেস গেট দিয়ে বিচারপতিরা, সেন্ট্রাল গেট দিয়ে আইনজীবীরা, শেরিফ’স গেট দিয়ে সরকারি আইনজীবী ও অন্য আইনজীবীরা প্রবেশ করেন। সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন ই-গেট দিয়ে। সেজন্য তাদের বিশেষ পরিচয় পত্র দেয়া হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি বাস্তবে মেনে চলা সম্ভব হয়না।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সূত্রের খবর, হাইকোর্টে অধিকাংশ আইনজীবীর পরিচয় পত্র নেই। কাউকে বাধা দিলেই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আইনজীবীদের তর্কাতর্কি রোজকার ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রবেশপথ নির্দিষ্ট করে দিলেও সেখান দিয়ে কে ঢুকছেন তা নিশ্চিত করা যায় না।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের অ্যাকসেস-কন্ট্রোল সিস্টেম পুলিশের হাতে না এলে নিরাপত্তা নিñিদ্র করা সম্ভব নয়। এজন্য বেশ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ। হাইকোর্টের চারপাশ বেড়া দিতে চায় কলকাতা পুলিশ যাতে অন্তত আদালত থেকে বেরিয়েই ফুটপথ পর্যন্ত কোনও ভিড় না থাকে। পাশাপাশি, হাইকোর্টের সব কর্মী ও আইনজীবীদের জন্য বায়োমেট্রিক পরিচয় পত্র চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া আদালত চত্বর থেকে গাড়ি পার্কিংও তুলে দিতে চায় তারা। আর এ ব্যাপারে পুলিশ হাইকোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিচারপতিদের কমিটি এবং আইনজীবী সমিতিকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছে।
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, হাইকোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি কর্মীদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী ধাপে আইনজীবীদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। আর এই পরিচয় পত্র দেয়ার দায়িত্ব পড়েছে আইনজীবী সমিতির হাতে। এছাড়া নির্দিষ্ট গেটে পরিচয় পত্র দেখিয়ে বিচারপ্রার্থীদের যাওয়ার ব্যবস্থাও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে বলে হাইকোর্ট সূত্র জানিয়েছে।