image_52143.dw.deমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডুপন্ট এবং ডাও কেমিকাল কোম্পানির সৃষ্ট পাইওনিয়ার ১৫০৭ ভুট্টার বীজ যে ইউরোপে অনুমোদন পাবে, তা প্রায় নিশ্চিত৷ অথচ বহু জার্মানই কিন্তু জিন-প্রকৌশলকে শয়তানের কারখানা বলে মনে করেন৷জার্মান ভাষায় সহজ করে বলা হয় ‘গেনমাইজ’ বা ‘জিন ভুট্টা’,  ৮৮ শতাংশ জার্মান যার বিরুদ্ধে, বলছে গ্রিনপিস সংগঠন৷ এর কারণ, ‘‘জিন-প্রকৌশলের মাধ্যমে পরিবর্তিত”, এই কথাগুলি দেখলেই এ দেশে অধিকাংশ মানুষের বিতৃষ্ণা হয়৷ জিন-প্রকৌশল তাঁদের কাছে ক্ষতিকর, বিপজ্জনক, একটা ভীতিকর ব্যাপার৷ আর সেই ভীতিতে ইন্ধন যোগাতে আছেন বহু রাজনীতিক ও বিশারদরা৷ এমনকি পরিবেশ সংরক্ষণবাদী সবুজ দল এবং বাভেরিয়ার রক্ষণশীল সিএসইউ দলও জিন-প্রকৌশলের এই সম্ভাব্য অথচ অপ্রমাণিত ঝুঁকি সম্পর্কে একমত৷ চারদিকে ‘জিন ভুট্টার’ চাষ হলে তার মাঝে অরগ্যানিক, অর্থাৎ পরিবেশসম্মত ভাবে চাষ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলেই তাদের ধারণা৷ কাজেই অরগ্যানিক চাষীদের পক্ষে সেটা একটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সমতুল হবে৷ – ওদিকে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল পর্যন্ত ‘জিন ভুট্টার’ সপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন৷

সিএসইউ দৃশ্যত পরিবেশবাদীদের নয়, বরং বাভেরিয়ার রক্ষণশীল চাষীদেরই রক্ষা করতে ব্যস্ত – যদিও সেই চাষীরা বিপুল পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে, যে কীটনাশক যাবতীয় উদ্ভিদ বিনষ্ট করার ক্ষমতা রাখে, যার রেশ পরে পাঁউরুটি কিংবা ময়দাতেও পাওয়া যায়; যে কীটনাশকের অতি ক্ষীণ রেশও সম্ভবত মানবদেহের কোষগুলির পক্ষে ক্ষতিকর৷ বাভেরিয়ায় এমন সব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মাটি ও পানিকে দূষিত করে, মৌমাছি এবং অন্যান্য কল্যাণকর কীটপতঙ্গ বিনাশ করে৷ অথচ বাভেরিয়ার সিএসইউ শাসকদলের যত চিন্তা, তা ঐ জিন-প্রকৌশল নিয়ে৷ কিন্তু পাইওডনয়ার ১৫০৭ ভুট্টার দানায় আসলে কী আছে? আছে বাসিলুস থুরিঙ্গেনসিস ব্যাকটেরিয়ার দু’টি বাড়তি জিন৷ বলতে কি, অরগ্যানিক পন্থায় কীটনাশের একটি জনপ্রিয় পন্থা হলো এই ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার৷ জিন-প্রকৌশলের মাধ্যমে ঢোকানো দু’টি জিনের একটির কাজ হলো এমন একটি পদার্থের সৃষ্টি করা, যা ‘কর্ন বোরার’ নামের কীটের শূকগুলিকে মেরে ফেলতে সক্ষম – অথচ অপরাপর কীটপতঙ্গের কোনো ক্ষতি করে না৷ এর ফলে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমে বৈ বাড়ে না৷

থেকে যাচ্ছে জিন-প্রকৌশল থেকে মানুষ অথবা পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি ঘটার ঝুঁকি নেই, তার নিরপেক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও পরিবেশন৷ অপরদিকে বীজধানের উপর কয়েকটি সংস্থার একচেটিয়া অধিকারের ফলে চাষীরা ঐ কোম্পানিগুলির উপর নির্ভর হয়ে পড়লেও চলবে না৷ এ সব নিশ্চিত করা হবে রাজনীতির কাজ৷ অপরদিকে এ-ও সত্য যে, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিন-প্রকৌশলের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ অকারণ ভীতির ফলে সেই সম্ভাবনাটুকু যাচাই না করেই নাকচ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে