imagesব্রিটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যানের অভিযোগসমূহ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আইসিসি। বাংলাদেশের সহিংসতার ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আবেদন করেন টবি ক্যাডম্যান। ৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কভিত্তিক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ফ্রিডম অ্যান্ড রাইটসের’ পক্ষে আবেদনটি করা হয়।
আবেদনে তিনটি পৃথক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে গতবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ৫ ও ৬ মে এবং ২৪ ডিসেম্বরের পর থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তার পরবর্তী সময়ে ‘সহিংসতার’ বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। টবি ক্যাডম্যানের আশা, শিগ্গির আবেদনটি গ্রহণ করা হবে।
ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে টবি ক্যাডম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি আইসিসি’র প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদার কাছে আবেদনটি জমা দেয়ার পরে ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউটরের কার্যালয় এবং আইসিসির বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বেশকিছু বৈঠক হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ ধরনের আবেদন করার আইনগত এখতিয়ার তাদের নেই।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেয় আদালত। ওই রায়ের পর দেশব্যাপী ব্যাপক তা-ব চালায় জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির।
এছাড়া ১৮ জোটের নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণার মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোটকেন্দ্র হিসেবে থাকা অসংখ্য স্কুলে আগুন দেয় বিরোধীরা। হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
টবি আবেদনে বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গতবছরের বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে হত্যা, গুম ও নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সঠিক চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসেনি।’
এসব ঘটনায় সরকারও কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত করার বিষয়ে বরাবর অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তার দাবি, আবেদনকারীদের গবেষণায় এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে, যা আইসিসির কাছে সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ প্রসিকিউটরের কাছে সরবরাহ করা হবে। এরপরে প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নিবেন এ বিষয়ে ‘প্রাথমিক তদন্ত’ শুরু করা হবে কি না।’
এই আবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইসিসি’র পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে, তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন টবি ক্যাডম্যান।
বিরোধী দলীয় জোটের পক্ষ থেকে করা এসব দমন-পীড়নের অভিযোগগুলো আসলেই ঘটেছে, না কি সরকারি দলকে চাপে রাখার কৌশল- সে প্রশ্নের জবাবে টবি বলেন, এটা খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জবাব দেয়া প্রয়োজন।
‘দাখিলকৃত অভিযোগটি হত্যা, নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গুমের নির্দিষ্ট ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে এসব ঘটনা রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ এবং এসব ঘটনা কৌশলে সারা দেশজুড়েই চালানো হচ্ছে। এর দায় সরকারের উপরই বর্তায়।’
প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার জন্য ‘যথেষ্ট’ বলে দাবি করছেন টবি ক্যাডম্যান।
টবি দাবি করেন, অভিযোগসমূহ আইসিসি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং এ ব্যাপারে নিজের এখতিয়ারের পুরোটাই নিরপেক্ষভাবে কাজে লাগাবেন আইসিসি প্রসিকিউটর।
‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিবে আইসিসি প্রসিকিউটর। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, এটা কোনো রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল নয়।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গতবছরের ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে জেনেভা ভিত্তিক জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার নাভি পিল্লাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।