11450_jamayet
সরকারের নির্যাতনের ডকুমেন্টারি তৈরি করছে জামায়াত

আন্দোলন দমনে সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের ডকুমেন্টারি তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামী। উদ্দেশ্য দেশে-বিদেশে এই ডকুমেন্টারি প্রকাশ ও প্রচার করে জনমত গঠন করা। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ড তুলে ধরা। জামায়াত-শিবিরের প্রচার প্রকাশনা শাখার একটি টিম এই ডকুমেন্টারি তৈরিতে কাজ করছে। ডকুমেন্টারি প্রচার-প্রকাশ শেষে দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর সামনে একযোগে চলবে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। তুলে ধরা হবে সরকারের নির্যাতনমূলক তথ্য- উপাত্ত। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রের দাবি, গত পাঁচ বছরে ৩০ হাজার মামলায় জামায়াত-শিবিরের পাঁচ লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার নেতাকর্মী। রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ৭০০০ হাজার নেতাকর্মীকে। পুলিশের গুলি ও  প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী। গুম হয়েছেন ৪৬০ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন চার সহস্রাধিক। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন প্রায় ৫০০০ হাজার নেতাকর্মী। এছাড়া ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে দলের নেতা-কর্মীদের সহস্ত্রাধিক বসতভিটা ধ্বংস করা হয়েছে। এ অবস্থায় দেশে-বিদেশে সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী-স্বৈরাচারী’ হিসেবে উপস্থাপন করতে বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতের ওপর নির্যাতনের ডকুমেন্টারিও তৈরি করছে তারা। দলের নতুন কর্মকৌশল ও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর সামনে চলবে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দমন-পীড়ন, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালিয়ে তাদের আন্দোলন দমন করা যাবে না। সূত্রের দাবি, বর্তমান সরকার জামায়াত-শিবিরের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরই কেবল যৌথ বাহিনী ও পুলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ২৭ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। গুম করা হয়েছে অনেককে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ আর দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গু হয়েছেন শ’ শ’ নেতাকর্মী। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আটক আছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করছে। এই অবস্থায় ফ্যাসিবাদী এ সরকারের হাত থেকে দেশ, জনগণ, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আন্দোলন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এজন্য ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিসহ বেশ কিছু কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে নতুন আন্দোলনের সূচনা করতে  চায় জামায়াতে ইসলামী। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে দলটি নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরতি দিয়ে হলেও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের চেয়ে জামায়াতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি তাদের। দলের শ’ শ’ নেতা-কর্মী এ আন্দোলনে নিহত ও আহত হয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করতে পারছেন না তারা। প্রথম সারির বেশির ভাগ নেতা কারাগারে বন্দি। দ্বিতীয়, তৃতীয় সারিসহ সর্বস্তরের নেতারা  পলাতক জীবন-যাপন করছেন।
এ অবস্থায় আগামীতে যে কোন একটি ইস্যুতে ‘ঢাকা ঘেরাও’ কর্মসূচিও দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ঢাকার বাইরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জোটের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ১৯ দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করতেও তারা তৎপর। এতে ওই সমাবেশে জামায়াত-শিবির নিরাপদে শো-ডাউন দেখাতে পারবে। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত দলীয় বৈঠকগুলোতে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়। বৈঠকে সরকার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখা এবং উপজেলাসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রতিদিন গ্রেপ্তার, পুলিশ ও যৌথবাহিনীর অভিযান এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকলেও চলমান উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে শক্তি ক্ষয় না করে সতর্ক থেকে সকল কার্যক্রম চালানোরও পরামর্শ দেয়া হয় নেতা-কর্মীদের। সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ’৯৬ সালের মতো আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চায় জামায়াত। ১৯ দলের নামে জোটগতভাবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিতে চায় দলটি। তাছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকবেন এবং সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন। নতুন পরিকল্পনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন জামায়াত নেতারা। সেটি হচ্ছে- জামায়াত নিষিদ্ধ হলে নতুন দল গঠনের পরিকল্পনা। এ ব্যাপারে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এখন থেকেই এ বিষয়ে নেতাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়। নতুন দল গঠনে সরকারের বাধা এলে কি করতে হবে সেটা নিয়েও আগেভাগে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চান দলটির নেতারা- যাতে কোনভাবেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে না পড়ে। জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও কৌশলগত কারণে সঙ্গে সঙ্গেই নতুন কোন দলের ব্যানারে না যাওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সময়-সুযোগমতো নতুন দলের ব্যানারে মাঠে নামবে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল পর্যায়ে দলের শক্তি ও জনসম্পৃক্ততা বহাল রাখতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হয়েছে। শীর্ষ নেতারা মনে করেন, এতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে এবং সাংগঠনিকভাবে তৃণমুলে দৃঢ় অবস্থানটিও ধরে রাখা যাবে। অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে বলা হয়েছে। যেখানে জামায়াতের প্রার্থী থাকবে না, সেখানে ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন জামায়াত সমর্থিতরা। ২০০৯ সালের নির্বাচনে সারা দেশে জামায়াতের ২৫ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ১৩ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ আদালতে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘অপরাধী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে দিলে দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। উপরন্তু দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের খড়গহস্ত আরও প্রসারিত হয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াতের রাজনীতি আরও বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ে। আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার পুরো দায়ই জামায়াতকে দেয়া হচ্ছে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিতেও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল ও সংগঠন দাবি তোলে। প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সময়ে তিন দফা নিষিদ্ধ হলেও দলটির এমন দুঃসময় অতীতে আর কখনও যায়নি বলেও অভিমত নেতা-কর্মীদের। তাদের ছেড়ে যেতে চাপ রয়েছে বিএনপিসহ সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে জামায়াত। এ ব্যাপারে দলের ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, রাজপথে সভা-সমাবেশ করা সকল নাগরিকের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। অথচ সরকার বিরোধী দলকে তাদের গণতান্ত্রিক, সাংবিধান ও মৌলিক এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কখনই সফল হবে না বরং জনগণ সরকারের দেশ ও জাতিসত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।