Pakistan-army-EPA-640x480
তালেবানের প্রতিশোধ ॥ ২৩ পাক সেনা হত্যা

পাকিস্তানী তালেবানের এক উপদল সে দেশের আধাসামরিক বাহিনীর ২৩ জন সৈন্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। এ সব সৈন্যকে ২০১০ সাল থেকে আটক রাখা হয়েছিল। রবিবার উপদলটির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। ওই জঙ্গী দলটির অন্যান্য উপদলে দেশটির সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটল। ইসলামী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানী সৈন্যদের হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানী তালেবানের মোহামান্দ শাখা এক লিখিত বিবৃতিতে এবং পরে ভিডিওবার্তায় এ কথা জানায়। গ্রুপটির এক কমান্ডার ওমর খালিদ খোরাসানি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর দায়েও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ডন অনলাইনের।
খোরাসানি ওই বিবৃতিতে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে থাকা আমাদের বন্ধুদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে আমরা ইতোপূর্বে মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারকে সতর্ক করে দেই। কিন্তু সরকার আমাদের লোকজনকে হত্যা করে চলেছে। কাজেই আমরা আধাসামরিক ফ্রন্টিয়ার কোরের ২৩ সদস্যের মৃত্যুদ- কার্যকর করেছি। এ বিষয়ে রবিবার পাকিস্তান সরকার বা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। খোরাসানির বিবৃতির সত্যতা নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি। কিন্তু তালেবান গত কয়েক বছর ধরে কিছুসংখ্যক আটককৃত বা অপহৃত পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করে। দলটি পাকিস্তানের ইসলামী আইন চালু করার লক্ষ্যে এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তালেবান ১৫ সৈন্যকে হত্যা করার দৃশ্য সংবলিত ভিডিও প্রকাশ করে। এর এক বছর আগে সেনাবাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোর ১৪ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে। তাদের ২০১০ সালে অপহরণ করে নির্যাতন ও কয়েকবার গুলি করা হয়েছিল। খোরাসানি রবিবার জানান, নিহত ২৩ সৈন্যকেও ২০১০ সালে আটক করা হয়েছিল। তারা তখন আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক চেকপয়েন্টে টহল দিচ্ছিল। তিনি দাবি করেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে, কারণ কারাগারে ছিল বলে মনে করা হতো এমন ১৬ জঙ্গীকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার কোর আফগানিস্তানসংলগ্ন গোলযোগপূর্ণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তেই বহুলাংশে টহল দিয়ে থাকে। এতে আরও ভালভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত বরাবর এর চিরবৈরী ভারতের দিকে দৃষ্টি রাখতে সুযোগ পায়। কয়েক বছর ধরে ফ্রন্টিয়ার কোন তালেবান বিদ্রোহীদের রোধ করতে অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিদ্রোহীরা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক উপজাতীয় এলাকা কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে।
যদি সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলো সত্য বলে নিশ্চিত হয়, তাহলে সেগুলো তালেবান জঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোন মীমাংসায় পৌঁছতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের চেষ্টার প্রতি এক গুরুতর আঘাত বলে প্রতিপন্ন হতে পারে। কয়েক মাসের প্রয়াশের পর শরীফের সরকার তিন সপ্তাহ আগে পাকিস্তানী তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আলোচনা শুরু করে। কিন্তু তখন থেকে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশটির লড়াই গভীরতর রূপ নিয়েছে মাত্র।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানী তালেবান দেশটির সবচেয়ে বড় শহর করাচীতে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় কিছুসংখ্যক পুলিশ অফিসারকে হত্যা করার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে। আর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশোয়ার শহরে স্থানীয় কর্মকর্তারা তালেবানসম্পৃক্ত দলগুলোর প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করার চেষ্টায় সব সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তালেবানের মোহমান্দ উপদলের ওই বিবৃতি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তালেবানের শক্তিশালী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে শরীফ ও পাকিস্তানের নয়া সেনাপ্রধান রাহিল শরীফের ওপর যে চাপ বাড়বে, তা প্রায় নিশ্চিত। উপদলটি পাকিস্তানের উপজাতীয় অঞ্চলের মোহমান্দ জেলার বাইরে থেকে তৎপরতা চালিয়ে থাকে।
জানুয়ারির প্রথমদিকে তালেবান জঙ্গীরা এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২০ পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করে।
এর পর পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তানে বোমাবর্ষণ করলে দৃশ্যত এক অভিযান শুরু হয়। কিন্তু এর এক সপ্তাহ পর শরীফ শান্তি প্রক্রিয়াকে আরেকবার সুযোগ দিতে চান বলে পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন। ওই অভিযানে ৪০ জঙ্গী নিহত হয় এবং হাজার হাজার লোক তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি ওই শান্তি আলোচনায় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে তিন সদস্যের এক টিম নিয়োগ করেন। তালেবানও এর প্রতিনিধিত্ব করতে তিন সদস্যের এক দলকে ক্ষমতা প্রদান করে। বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতারা এর নেতৃত্ব দেন। দুই পক্ষ কোন অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছতে এ পর্যন্ত অসমর্থই হয়েছে। শরীফ আরও বাস্তবমুখী আলোচনা শুরু করার আগে ওই রূপ চুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।