11717_anondobajar
ডাকাতের বউ বিয়ে করে পলাতক পুলিশ

ডাকাতের ভয়ে থানার দুয়ার মাড়াচ্ছে না পুলিশ!
ফোনে যা-ও বা সাড়াশব্দ মিলছে, দু’দিন ধরে দেখা নেই এক সাব-ইনস্পক্টরের। রুলবুক মেনে তাঁর নামে ‘নিখোঁজ’ ডায়েরিও করে ফেলেছে বসিরহাট থানা।
অপরাধ জগতে বাদুড়িয়ার শ্রীকাটি গ্রামের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদের নামডাক বহু দিনের। উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচার-সহ নানা অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এক বার পুলিশের চোখে লঙ্কা গুঁড়ো ছিটিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে পালানোর চেষ্টাও করেছিল সে। আপাতত ধরা পড়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে।
সেই ফিরোজেরই বিবি ঘর করতে গিয়েছেন সাব-ইনস্পেক্টরের প্রেমে। সেই সাব-ইনস্পেক্টর, যিনি ফিরোজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছিলেন। থানায় যাতায়াত করতে-করতেই তাঁর সঙ্গে আলাপ বছর সাতাশের ফিরোজ-ঘরণীর। সেই আলাপ এমন জমে ওঠে যে বছর আটচল্লিশের সংসারী উর্দিধারী ঠিক করে ফেলেন, ফের নিকাহ্ করবেন। মধ্যজীবনে হঠাৎ এই বাঁক? সাব-ইনস্পেক্টরের ব্যাখ্যা, “শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওকে মারধর করত। হুমকি দিত। ওর জীবনের করুণ কাহিনী শুনেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। গত জুনেই জেলে থাকা স্বামীকে ডিভোর্স দেয় ও। দুই পরিবারের মত নিয়ে জানুয়ারিতে আমরা রেজিস্ট্রি করি।”
হুগলির চন্দননগরে তাঁর পরিবারে আছেন স্ত্রী আর বছর ষোলোর ছেলে। ‘অসুস্থ’ বলে থানায় জানিয়ে রবিবার তিনি ছুটি নিয়েছিলেন। রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়েটা সেরে ফেলেন। “আমার প্রথম স্ত্রীও এই বিয়েতে আপত্তি করেননি। আইন মেনেই সব হয়েছে” জানিয়ে দেন অফিসার।
অন্য কেউ হলে হয়তো এ হেন আলাপের প্রতিক্রিয়া বিলাপেই ক্ষান্ত হত। কিন্তু ফিরোজ কি শুধু কেঁদে ভাসানোর লোক? বসিরহাট থানায় হুমকি ফোন আসা শুরু হয়েছে। ফিরোজ নয় শ্রীঘরে, তার দলবল তো আর খাঁচায় বসে নেই। ফোনে কখনও অকথ্য ভাষায় প্রেমের শ্রাদ্ধশান্তি করা হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে, দু’জনকেই জানে মেরে দেওয়া হবে। ফিরোজের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে শীতলিয়া গ্রামে তার ‘প্রাক্তন’ শ্বশুরবাড়ির কাজিয়াও বেধেছে। পুলিশ এক বার গ্রামে গিয়েছিল। মেয়ের দাদা জানিয়ে দিয়েছেন, ডাকাত জামাইয়ের থেকে পুলিশ-বর ঢের ভাল।
এই টানাপোড়েনে দ্বিধাগ্রস্ত পুলিশমহলও। জেলার পুলিশকর্তাদের একাংশের মতে, তদন্তকারী অফিসার হিসাবে অভিযুক্তের স্ত্রীকে বিয়ে করে বসাটা উচিত কাজ হয়নি। আর এক অংশ আবার বলছে, “কে কাকে বিয়ে করল, সেটা দেখা আমাদের কাজ নয়। দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। সংখ্যালঘুদের নিয়ম-কানুন মেনেই বিয়ে হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, সেটা দেখতে হবে।”
বেগতিক বুঝে উপরমহলে সব জানিয়েছেন বসিরহাট থানার আইসি প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর বক্তব্য, “গ্রামে উত্তেজনা রয়েছে। থানায় ফোন আসছে। আমাদের অফিসারের কোনও বিপদ ঘটলে তার দায় কে নেবে?”
চিন্তিত নববধূও। এটি তাঁর তৃতীয় বিয়ে। প্রথম পক্ষের স্বামী ছিলেন দর্জি। দ্বিতীয় পক্ষ ডাকাত। তৃতীয় পক্ষ পুলিশ। তাঁর কথায়, “ভুল লোককে সঙ্গী করে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এ বার এক জন সৎ মানুষকে বিয়ে করতে পেরে আমি খুশি।” প্রথম পক্ষের বছর সাতেকের মেয়ে তাঁর কাছেই থাকে। ফিরোজের দু’বছরের ছেলেও রয়েছে তাঁর সঙ্গে।
এখন ফিরোজ যদি ‘লভ কে লিয়ে কুছ ভি’ করে বসে?
“বিয়ে যখন করেছি, তখন স্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আমারই” বলেন বটে সাব-ইনস্পেক্টর। কথাটার জোর কিন্তু গলায় বাজে না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা