Love-Quotes-4-640x480
ভয়ঙ্কর প্রেমিক!

চার বছর আগে সেলফোনে পরিচয়। পরিচয়  থেকে প্রেম। প্রেমিক লিটন মিয়া পরিচয় গোপন করে প্রেমিকা সোনিয়ার কাছে। নিজেকে পরিচয় দেয় ‘ধনীর দুলাল’ হিসেবে। ৬ মাস আগে সোনিয়া জানতে পারেন পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি লিটনের আসল রূপ। হেনা নামের এক নারীর সঙ্গে ১১ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তার। এ তথ্য জানার পর ‘প্রেমের সম্পর্ক’ অস্বীকার
করেন সোনিয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয় লিটন। জিঘাংসা পূরণ করতে গরু জবাইয়ের ছুরি নিয়ে সোনিয়া তার কর্মস্থলে ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্মত্তের মতো। গলা কেটে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।  সোনিয়ার গলায় ছুরি চালানোর পর নিজে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। গলায়, পায়ে, পিঠে ক্ষত নিয়ে গুরুতর আহত সোনিয়া এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের দ্বিতীয় তলার ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এদিকে লিটনেরও ঠাঁই হয়েছে একই হাসপাতালে। পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা চলছে তারও। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার সন্ধ্যায় গেণ্ডারিয়ার লোহারপুল এলাকার ডেল্টা প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সোনিয়া আক্তার (২০) গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী  রোড-এ ১০/এ মা ভিলায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাধ্যমিকের পরীক্ষার গণ্ডি পেরুতে পারেননি। লোহারপুল এলাকায় ডেল্টা প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এ একজন চিকিৎসকের সিরিয়াল ম্যান হিসেবে কাজ করেন। কাঠেরপুল এলাকায় জেনারেটরের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ও লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে লিটন। স্ত্রী হেনাকে নিয়ে বাস করে লোহারপুল এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। তিন বছর আগে মোবাইলে ‘ক্রস কানেকশন’-এ লিটনের সঙ্গে কথা হয় সোনিয়ার। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। নিজের বিয়ের কথা গোপন করে লিটন চুটিয়ে প্রেম করে সোনিয়ার সঙ্গে। এক পর্যায়ে লিটনকে স্বামী হিসেবে পেতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সোনিয়া। কিন্তু তার মোহ ভেঙে যায়। ৬ মাস আগে লিটনের আসল পরিচয় বেরিয়ে পড়ে। জানা যায় সে বিবাহিত। লিটন  ধনীর দুলাল নয়, পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মাথায় যেন বাজ পড়ে সোনিয়ার। নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। সম্পর্ক ছিন্ন করেন লিটনের সঙ্গে। কিন্তু লিটন নাছোড়বান্দা। সোনিয়াকে স্ত্রী হিসেবে পেতে হেনাকে মৌখিকভাবে ডিভোর্স দেয়। তাতেও রাজি হননি সোনিয়া। একপর্যায়ে মোবাইলে হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করে। তাতেও কাজ না হওয়ায় ক্ষিপ্ত লিটন বেছে নেয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। রোববার বিকালে ধারালো ছুরি নিয়ে সে হাজির হয় সোনিয়ার কর্মস্থল ডেল্টা প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তাকে বেরিয়ে আসতে বলে। কিন্তু সোনিয়া তার সঙ্গে যেতে রাজি হননি। একপর্যায়ে লিটন প্যাথলজির ভেতরে সোনিয়াকে মেঝেতে শুইয়ে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে তার শরীর। একসময় নিজের কাছে থাকা বিষাক্ত হেক্সাসল পান করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। প্যাথলজিতে আসা রোগীর স্বজন ও কর্মচারীরা মিলে রক্তাক্ত সোনিয়াকে নিয়ে যায় পাশে বেসরকারি ক্যাপিটাল হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে স্থানান্তর করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রথমে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তৃতীয় তলায় নাক-কান-গলা বিভাগে সোনিয়ার গলায় অস্ত্রোপচার শেষে আবারও তাকে নিয়ে আসা হয় জরুরি বিভাগে। সেখানে অন্যান্য ক্ষতের অস্ত্রোপাচার চলে রাত তিনটা পর্যন্ত। সোমবার সকালে তাকে স্থানান্তর করা হয় ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডে। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সোনিয়া। বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছেন। পাশেই কাঁদছেন বড় বোন রানু আক্তার। ভাই মুন্না ভাবলেশহীন। কাঁপা কাঁপা গলায় সোনিয়া বলেন, আমার জীবনটাকে ও (লিটন) নষ্ট করে ফেলেছে। এই ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচবো? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। লিটনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন  সোনিয়ার গলায়, কোমরের ওপর, বাম উরুতে ছুরির কোপে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। চিকিৎসার ভাষায় যাকে ‘স্ট্যাব ইনজুরি’ বলা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় এখন পর্যন্ত পাঁচ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই ডেল্টা প্যাথলজিতে সংজ্ঞাহীন লিটনকে পুলিশ উদ্ধার করে একই হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানেই তার চিকিৎসা করা হয়। এখন সে একটু সুস্থ হলেও হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন। ঘটনার তদারককারী গেণ্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সিরাজউদ্দৌলা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে লিটন এ ঘটনা ঘটিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মেয়েটির অবস্থা গুরুতর। ভিকটিমের স্বজনরা চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনও কোন মামলা হয়নি। তবে থানায় ঘটনার লিখিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মামলা হলে তদন্ত করা হবে।