National-emblem-of-Bangladesh-300x300সংলাপ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা সরকারের
সংলাপ নিয়ে সরকার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। কূটনৈতিক মহলও সরকারকে সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অর্থবহ একটি সংলাপ অনুষ্ঠান এবং দ্রুতসময়ের মধ্যে আরেকটি নতুন নির্বাচন করা। বিরোধী দলও চাচ্ছে একটি অর্থবহ সংলাপ। যার মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
কিন্তু এরকম একটি পরিবেশ কি আদৌ সৃষ্টি হবে? এ নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চলছে; তখন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। দেশে বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের পরে সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তিনি এটাও জানান যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যা যা করার দরকার-তা করবে। গতকাল মঙ্গলবার কানাডিয়ান হাইকমিশনার হিথার ক্রডেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জরুরিভিত্তিতে সংলাপের তাগিদ দিলে মন্ত্রী তাকে (কানাডিয়ান হাইকমিশনার) একথা জানান।
এদিকে, গত সপ্তাহে লন্ডনে সফরকালে মিনিস্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এলন ডানকান ও সিনিয়র মিনিস্টার অব স্টেট এট দ্য ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস এডমিনিস্ট্রেশন ফর ফেইথ অ্যান্ড কমিউনিটিস অ্যান্ড লোকাল গভরম্যান্ট ভ্যারনিস ওয়ারিস-এর সাথে আইনমন্ত্রী যে বৈঠক হয়েছে সেখানেও বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি প্রসঙ্গ এসেছে। ওই বৈঠকেও মন্ত্রী বলেছেন, কেন এবং কি কারণে সরকারকে এই নির্বাচন করতে হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন। এই দুই মন্ত্রী আমাকে জানান, সরকারের বৈধতা নিয়ে তাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। যুক্তরাজ্য সরকার  অতীতের সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে। তবে তারা সংলাপের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
দ্রুত সংলাপের ব্যাপারে শুধু কানাডা কিংবা যুক্তরাজ্য সরকারই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সিনেটে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই তার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি অর্থবহ সংলাপ চায়। যার মধ্যে দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দ্রুত একটি নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
এরকম একটি পরিস্থিতিতে সংলাপ নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য গোটা জাতির কাছে একটি নতুন আশার বাণী পৌঁছে দিয়েছে। আর তা হচ্ছে সরকার সংলাপের ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু এটাও ঠিক যে, সংলাপের অর্থবহ পরিবেশ সৃষ্টির একক দায়িত্ব শুধু সরকারের ওপরই বর্তায় না। বিরোধী দলকেও নমনীয়তা দেখাতে হবে। সহিংস রাজনীতি কখনোই সংলাপের দ্বার উন্মোচন করতে পারে না; বরং তা দেশকে আরও পিছিয়ে দেবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকেই এমন বক্তব্য দেন যে, সরকার পাঁচ বছরের আগে ক্ষমতা ছাড়বে না। সাংবিধানিক বিশ্লেষণে গেলে এই সংসদ ভেঙে দেয়া না হলে এর মেয়াদকাল পাঁচ বছরই থাকবে। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু একথাও সত্য যে, এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে যেসব দল, তাদের বাইরেও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনকৃত ২৮টি দল রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বধীন ১৯ দল, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মতো রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দল নির্বাচন বয়কট করায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও ছিল খুবই কম। আর সে কারণেই সরকারকে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিচ্ছে কূটনৈতিক মহল।
এদিকে, কানাডিয়ান হাইকমিশনারের সাথে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, তিনি (কানাডিয়ান হাইকমিশনার) গণতন্ত্র, দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের জন্য জরুরিভিত্তিতে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন বলে আমাকে জানিয়েছেন। জবাবে আমি বলেছি দেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচন শেষ হলে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কানাডিয়ান হাইকমিশনার জানান, এদেশে হরতাল, সহিংসতা বন্ধের জন্যই প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিলে সরকারের মহত্বই প্রকাশ পাবে। কানাডিয়ান হাইকমিশনার আমাকে জানিয়েছেন, তারা এদেশে আর সহিংসতার রাজনীতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।
এমন পরিস্থিতিতে সংলাপ নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের পর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি অর্থবহ সংলাপ অনুষ্ঠিত হলে তা দেশের গণতন্ত্র ও  অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।